রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

থানায় চুরি-ছিনতাইয়ের মামলা নিতে অনীহা

রহস্যজনকভাবে জিডি করতে বলে পুলিশ

মাহবুব মমতাজী

চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা নিতে চায় না পুলিশ। ভুক্তভোগীরা থানায় গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেয়। ওই জিডিতে চুরি বা ছিনতাই হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র ‘হারিয়ে গেছে’, ‘খোয়া গেছে’ বা ‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’ বলে উল্লেখ করতে হয়।

সূত্র জানায়, গত ২২ মার্চ গভীর রাতে ধানমন্ডি ১৪ নম্বর সড়কে পিস্তল ঠেকিয়ে রুমিনুল ইসলাম ও তার এক বন্ধুর মোটরসাইকেল, দুটি মোবাইল ফোন, ডেবিট কার্ড ও সাড়ে তিন হাজার টাকা ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ ঘটনায় মামলা না নিয়ে জিডি হিসেবে নেয় ধানমন্ডি থানা পুলিশ। ১৩ জানুয়ারি হাই কোর্টের সামনে হাসান জাহিদ নামের এক ব্যক্তির ল্যাপটপ ছিনতাইয়ের ঘটনায়ও জিডি নেয় শাহবাগ থানার পুলিশ। রাজধানীর পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা সেতুর কাছে চালক সুমনকে মারধর করে তার সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন দুই যুবক। সুমনের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এসে ইসরাফিল ও সুমন মিস্ত্রি নামের দুই যুবককে ধরে পিটুনি দিয়ে শ্যামপুর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এ ঘটনায় মামলাও নেয়নি পুলিশ। এই ঘটনা গত ২ মের। থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার এমন অভিযোগ পুরনো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এমন ঘটনা বেড়েছে। এমনকি সুমনের অটোরিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনার মতো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হাতেনাতে ধরিয়ে দেওয়ার পরও পুলিশ মামলা নেয়নি এমন অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কোনো থানা এলাকায় ছিনতাই-ডাকাতি-চাঁদাবাজি বেড়ে গেলে ধরে নেওয়া হয়, ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো বা নিয়ন্ত্রণে আছে দেখাতে থানা পুলিশ এসব ক্ষেত্রে কম মামলা নেয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়েব সাইটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের শুধু মে মাসেই ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, অপহরণ, গাড়ি চুরি, মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনে রাজধানীর ৪৯টি থানায় এক হাজার ৩৯৭টি মামলা হয়। এর মধ্যে দস্যুতার মামলা মাত্র ৯টি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চুরি কিংবা ছিনতাইয়ের কোনো মামলা নেই। তবে ভুক্তভোগী ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রকৃতপক্ষে ছিনতাই অপরাধের ঘটনা আরও বেশি। কারণ ছিনতাইয়ের শিকার অনেকে হয়রানির আশঙ্কায় থানায় যান না। আবার  যারা যান তাদের অভিযোগও অনেক ক্ষেত্রে জিডি হিসেবে নেয় পুলিশ। চুরির মামলা নিতে পুলিশের অনাগ্রহের কারণে চুরি হওয়া মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রেও ‘হারিয়ে গেছে’ বলে জিডি করতে হয়। ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে পুলিশ কালেভদ্রে মামলা নিলেও সাধারণত দস্যুতার ধারায় তা (দণ্ডবিধির ৩৯২ ধারা) নেয়। রাজধানীতে ছিনতাই নৈমিত্তিক ঘটনা হলেও পুলিশের হিসাবে গত বছর ঢাকার সব থানায় মাত্র ৮৭টি দস্যুতার মামলা হয়। অর্থাৎ সারা শহরে দিনে গড়ে একটি করেও নয়! চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে দস্যুতার মামলা হয়েছে যথাক্রমে ৭টি, ১৩টি, ৭টি, ৬টি এবং ৯টি করে। জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মহানগর এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের অনেক ঘটনা আছে। ওয়েবসাইটে সেগুলো কেন আপডেট হয়নি তা বলতে পারছি না। আর ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো থানায় এমন ঘটে তাহলে ভুক্তভোগীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে পারেন।

কয়েকটি ঘটনা : গোলাম সরওয়ার। তিনি বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করেন শনির আখড়ার দক্ষিণ ধনিয়াতে। ঘটনার দিন গত বছরের ১৩ এপ্রিল। তার বিকাশ এ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ মিনিটের মাথায় এক লাখ ৩৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে প্রতারকরা। একই মাসের ২৬ তারিখে প্রতারক চক্রের একই ফাঁদে পড়ে এক লাখ ১৯ হাজার টাকা খুঁইয়েছেন লিটন হাওলাদার নামের আরেক বিকাশ এজেন্ট। তিনি ব্যবসা করেন কদমতলী এলাকার কুদরত আলী বাজারে। ঘটনার পর দুজনেরই জিডি নেয় কদমতলী থানা পুলিশ। একই বছরের ১৩ আগস্ট একই ধরনের প্রতারকদের ফাঁদে পড়েন মো. শরীফ হোসেন নামের এক বিকাশ এজেন্ট। এদিন তার মোট এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা খোয়া যায়। মীরহাজিরবাগ কাঁচাবাজার এলাকায় দোকান রয়েছে তার। ঘটনার পর তার কাছ থেকেও যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি নেওয়া হয়। 

সর্বশেষ খবর