রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মহাসড়কে চাপ বেড়েছে পুরো কাটেনি যানজট

প্রতিদিন ডেস্ক

ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ ফিরতে থাকায় হঠাৎ করেই রাজধানীমুখী মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। পাশাপাশি প্রশাসন সড়কপথ নির্বিঘ্ন রাখার চেষ্টা করলেও নানা কারণে যানজট পুরোপুরি কাটানো সম্ভব হয়নি। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

টাঙ্গাইল : ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে শুক্রবার দুপুরের পর থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের চন্দ্রা মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার এলাকায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাতভর এই যানজটে শত শত যানবাহনের হাজারো যাত্রীকে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় দিকে থেমে থেমে যানজট ছিল। ঈদের ছুটি গত সপ্তাহে শেষ হলেও আজ থেকে কর্মজীবীরা কাজে যোগদান করবেন— এমন হিসাব করে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাজধানীর উদ্দেশে রওনা দেন মানুষ। এতে মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ বেড়ে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক ও বাস বিকল হলে যান চলাচল ও রাস্তায় গাড়ি রেখে ট্রাক চালকরা ঘুমিয়ে পড়ায় যানজট স্থায়ী হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। গাইবান্ধা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাসের হেলপার রাশেদ জানান, তিনি রাত ১২টায় রওনা হয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় মির্জাপুর এসে পৌঁছেছেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসের যাত্রী সাথী আক্তার বলেন, ‘তিন ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় আটকা পড়ে রয়েছি। শিশুসন্তান নিয়ে বাস থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছি।’

এদিকে যানজট নিরসনে মির্জাপুরের গোড়াই  হাইওয়ে ও থানা পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম জানান, ঈদের ছুটি আগে শেষ হলেও বেশির ভাগ কর্মজীবী কর্মক্ষেত্রে যোগদানের উদ্দেশে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে একযোগে ঢাকামুখী হওয়ায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অতিরিক্ত বেড়েছে। এ জন্য যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া রাতে ট্রাকের চালক ঘুমিয়ে পড়া, রাস্তায় যানবাহন বিকল হওয়া ও ছোটখাটো দুর্ঘটনার কারণেও রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিরসনে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বগুড়া : ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত মহাস্থান সেতুর ?ওপার-এপারে যানবাহনের চাপ কমে এসেছে। তবে যানজট রয়েছেই। গতকাল ১০ মিনিট পরপর ব্রিজের এপার-ওপার থেকে যানবাহন চলাচল করেছে। রংপুরগামী যাত্রীবাহী বাসগুলো বিকল্প পথ শিবগঞ্জ উপজেলার ভিতর দিয়ে চলাচল করায় ব্রিজের ওপর থেকে চাপ কমে যায়। এর ওপর দিয়ে শুধু ট্রাক এবং ঢাকাগামী যানবাহন চলাচল করেছে। মহাস্থান ব্রিজে ফাটল ধরায় ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতুর ওপর দিয়ে ওয়ানওয়ে করে যানবাহন পার করে দেওয়া হয়েছে। বগুড়া শহরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আনোয়ার হোসেন জানান, সেতুর বেহাল দশায় উভয় পাশে এসে মহাসড়কের এক পাশ হয়ে বিভিন্ন যানবাহন দাঁড়িয়ে পড়েছে। পরে নির্দিষ্ট সময় পরপর গাড়িগুলো সেতুর এপার-ওপার পার করে দেওয়া হয়েছে। সেতু ঠিক থাকলে এই যানজটটুকুও থাকত না। বগুড়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান জানান, ব্রিজের ফাটল অংশকে চাপমুক্ত রাখতে আরও কিছু কাজ করা হচ্ছে। সেটি গতকাল দুপুর থেকে শুরু হয়েছে। সেতুর নিচে মাটি থেকে ৬০ ফুট গভীরে ৪০টি স্টিলের পাইপ বসানো হবে। পাইপগুলো ফাটল স্প্যানের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। এর মধ্যে ১৫টি পাইপ বসানোর কাজ প্রায় শেষ। বাকিগুলো বসিয়ে তা ফাটল বিমের সঙ্গে বিশেষ কায়দায় যুক্ত করে দেওয়া হবে। পুরো কাজটি শেষ হতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। মাদারীপুর : দেশের ব্যস্ততম শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে নাব্য সংকট ও ডুবোচর প্রকট রূপ ধারণ করায় ৯ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল সকাল থেকে ছোট ও মাঝারি ফেরি চলাচল শুরু করেছে। বেলা দেড়টার দিকে চালু হয়েছে রো রো ফেরি। তবে এ ফেরিগুলো ধারণক্ষমতার চেয়ে কম যানবাহন নিয়ে পারাপার করেছে। কাঁঠালবাড়ি ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল মমিন জানান, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বিকল্প চ্যানেল দিয়ে ফেরি সার্ভিস চালু হলেও কয়েকটি স্থান ওয়ানওয়ে থাকায় পারাপারে দীর্ঘ সময় ব্যয় হচ্ছে। সব ধরনের ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় দীর্ঘ ৯ দিন পর এ রুটে ট্রাক ও যাত্রীবাহী পরিবহন, যাত্রীবাহী পরিবহন ও পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ বেড়েছে। আগামীতে আরও চাপ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাট থেকে কিছু যানবাহন এ রুট দিয়ে এরই মধ্যে চলতে শুরু করেছে। তবে একাধিক যাত্রী অভিযোগ করে জানান, কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে স্পিডবোটে যাত্রী প্রতি ১২০ টাকার ভাড়া ১৮০ টাকা ও লঞ্চ-ফেরিতে ৫ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে। কর্তৃপক্ষকে কিছু বললে তারা নাজেহাল করতেও দ্বিধা করছে না। ঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উল্লেখ্য, গত ১ সেপ্টেম্বর নাব্য সংকটের কারণে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরে ঈদের দিন থেকে মাত্র ৬টি ফেরি ছাড়া বাকিগুলো চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এ রুট দিয়ে ২০টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ ও দুই শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে।

সর্বশেষ খবর