শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিলেটে বিদ্যুতের ডিজিটাল সেবা হয়রানিতে দুই লাখ গ্রাহক

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

এক মাস আগে যে গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল এসেছিল দুই হাজার ৩৬ টাকা, এক মাস পর সে গ্রাহকের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৯ হাজার ৫০১ টাকার বিল! শুধু এই গ্রাহকই নন, সিলেটে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে এই হয়রানির মুখে পড়েছেন প্রায় দুই লাখ গ্রাহক। বিদ্যুৎ বিল ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে গিয়ে ভজঘট বাধিয়ে বসেছে সিলেট বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ। তাদের অব্যবস্থাপনা আর মিটার রিডারদের দুর্নীতির কারণে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। হয়রানিতে পড়ে গ্রাহকরা তোপ দাগছেন বিদ্যুৎ অফিসে, করছেন বিক্ষোভ।

বাধ্য হয়ে অফিসগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। সিলেট বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সূত্র জানায়, সিলেট মহানগরীতে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম ভাগে ৫০ হাজার, দ্বিতীয় ভাগে ৭২ হাজার, তৃতীয় ও চতুর্থ ভাগে সমান ৩২ হাজার করে গ্রাহক রয়েছেন। গত আগস্ট মাসে এসব গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু চলতি মাসে আসা বিদ্যুৎ বিল দেখে গ্রাহকদের চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা। গত মাসে যাদের বিল এক হাজার টাকারও কম ছিল, তাদের বিল এ মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা এসেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার বিদ্যুৎ বিভাগকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে চায়। এ লক্ষ্যে সিলেট বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ বিদ্যুৎ বিল তৈরিতে বৈদ্যুতিক মিটার দেখে হাতে রিডিং লিখার পরিবর্তে ছবি তুলে বিল তৈরি শুরু করে। গত মাস থেকে শুরু হওয়া এ পদ্ধতিকে সংশ্লিষ্টরা ‘স্ন্যাপ সিস্টেম’ বলছেন। এ স্ন্যাপ সিস্টেমে বিল তৈরি করে গ্রাহকদের অস্বাভাবিক বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্ন্যাপ সিস্টেমের মূল সার্ভার হচ্ছে টাঙ্গাইলে।

 সিলেট থেকে ডাটা সরাসরি সেখানে চলে যায়, প্রসেস হওয়ার পর সিলেটে আসে। এই পদ্ধতির মূল সুবিধা হচ্ছে, মিটার রিডারদের অবশ্যই প্রত্যেক গ্রাহকের আঙ্গিনায় গিয়ে মিটার দেখেই রিডিংয়ের ছবি তুলতে হবে। এতে সঠিক বিল তৈরি হবে।

কিন্তু স্ন্যাপ সিস্টেম চালুর পরই কেন অস্বাভাবিক বিলের ফাঁদে পড়লেন গ্রাহকরা- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেরিয়ে এলো মুন্সী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েটস নামক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির তথ্য। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সঠিকভাবে মিটার দেখে বিদ্যুৎ বিল তৈরি না করায় সিলেটে শতাধিক মিটার রিডারকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পাঁচ মাস আগে সিলেটে বিদ্যুৎ বিল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় মুন্সী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েটসকে। এ প্রতিষ্ঠান সিলেটের বাইরে থেকে লোক এনে মিটার রিডার হিসেবে কাজে লাগায়। কিন্তু এরা গ্রাহকদের বাসাবাড়ি না চেনায় অনুমানের ওপর ভিত্তি করে মিটার রিডিং দিয়ে বিল তৈরি করে। সঠিক রিডিং না হওয়ায় গ্রাহকদের মিটারে ব্যবহূত ইউনিট জমে থাকে। এখন সঠিক রিডিং নিতে গিয়ে আগের বাকি থাকা ইউনিটগুলোও বর্তমান বিলের সঙ্গে যোগ হচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা বাড়তি বিল পাচ্ছেন। তবে শতাধিক মিটার রিডারকে অনিয়মের দায়ে চাকরিচ্যুত করা হলেও মুন্সী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েটসের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এখনো।

এদিকে, অস্বাভাবিক বিল পেয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের এখন মাথায় হাত। তারা বিলের কাগজ নিয়ে ধরনা দিচ্ছেন বিদ্যুৎ অফিসে। কিন্তু বিল কমানোর কোনো আশার বাণী শুনছেন না গ্রাহকরা।

সিলেট নগরীর বালুচরের আবদুল মন্নান কয়েস বলেন, ‘গত মাসে বিল এসেছিল ৭৬১ টাকা। এ মাসে ১৪ হাজার ৮০৬ টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে! এত টাকা আমি কীভাবে পরিশোধ করব!’

টুলটিকরের চামেলীবাগ ১০৬ নম্বর বাসার সামিয়া সুলতানা চৌধুরী বলেন, ‘গত মাসে দুই হাজার ৩৬ টাকা বিল এসেছিল। এ মাসে এসেছে সাড়ে ১৯ হাজার টাকা। আমরা কেন এই এই হয়রানির শিকার। এর দায় কার?’

গ্রাহকদের ওপর থেকে চাপ কমাতে কিস্তি সুবিধার কথা বলছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস, ‘যাদের বিল বেশি হয়ে গেছে, তাদের কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দিচ্ছি আমরা।’

এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইরফানুজ্জামান বলেন, ‘যে গ্রাহক প্রতি মাসে বিল পরিশোধ করেন, তাকে জমানো ইউনিটে বিল দেওয়া মানেই দুর্নীতি। মিটার রিডারদের দুর্নীতির দায়ভার গ্রাহকদের ওপর চাপানো কিছুতেই উচিত নয়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর