মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিচারবহির্ভূত হত্যা তদন্তে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের সুপারিশ

মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং বল প্রয়োগে ধরে নেওয়ার অভিযোগগুলোর তদন্ত এবং বিচারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। একইভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ডে সন্ত্রাসবাদের সমস্যাকে চিহ্নিত করে এর মূল কারণ খুঁজে বের করার কথাও বলা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দিনব্যাপী এ খসড়া প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার কর্মী, উন্নয়ন সহযোগী, সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে খসড়াটি তৈরি করেছে। উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির সহায়তায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের কাছে জমা দেওয়ার জন্য সরকারের পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে ছায়া প্রতিবেদনের খসড়া করেছে, তাতে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। ৫ অক্টোবর কমিশন প্রতিবেদন জমা দেবে। ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) বা সর্বজনীন পুনর্বীক্ষণ জাতিসংঘ মানবাধিকার-ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত একটি প্রক্রিয়া। ২০১৮ সালের মে মাসে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে কমিশনের এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। সভার সমাপনী পর্বের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, ‘সমাজের সুবিধাভোগী, অবস্থাপন্ন,  ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের কেউ কেউ মনে করেন তারা আইনের শাসনের ঊর্ধ্বে। তারা মনে করেন, আইন হলো অন্যদের জন্য, তাদের জন্য নয়। সমাজে যত দিন এ অবস্থা চলমান থাকবে, তত দিন মানবাধিকারের সংস্কৃতি গড়ে উঠবে না। মানবাধিকার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে প্রথমেই স্বীকার করতে হবে অন্যদের অধিকার আছে। ব্যক্তিগত জীবনেও আইনের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।’ সভার সমাপনী অধিবেশনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ইউএনডিপির উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক এবং তদন্ত এবং মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ লুবনা ইয়াসিন। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইউএনডিপির দেশীয় পরিচালক সুদীপ্ত মুখার্জি। কমিশনের প্রতিবেদনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত ৪৫ জন গুমের শিকার। গত বছর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ১১৭ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার। গত আট বছরে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ৩৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

কমিশনের প্রতিবেদনে যা আছে : জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফের প্রতিবেদনের (গত বছর) তথ্য উল্লেখ করে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সীদের ৫২ শতাংশ বাল্যবিবাহের শিকার। মানব পাচারের ৭৪৯টি ঘটনার মধ্যে ২৮৫টির শিকার নারী এবং ১০৬টির শিকার শিশু। নারী ও শিশু নির্যাতন ঘটনার মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৯ শতাংশ শিশু বাড়িতে নির্যাতনের শিকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরুষ শিক্ষকের তুলনায় নারী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বেশি নির্যাতন করেন। প্রতিবেদনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিশু কমিশন এবং শিশু অধিদফতর গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ১৯৫১ সালের ২৩ শতাংশ থেকে কমে ২০১১ সালে হয়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। হিজড়াসহ অন্যান্য যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়েছে এতে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সঙ্গে লবিং চালানো এবং সমাধানের পথ খুঁজে  বের করার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে প্রতিবেদনে। রোহিঙ্গাদের  ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি যাতে স্বচ্ছ হয়, তারও তাগিদ  দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর