শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফারমার্স ব্যাংকের আর্থিক ভিত শক্তিশালী হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে বেসরকারি খাতের নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের আর্থিক ভিত শক্তিশালী হচ্ছে। ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর কৃষিঋণসহ সামগ্রিক ঋণ বিতরণ, আমানত গ্রহণ, রেমিট্যান্স সংগ্রহ, রপ্তানি, খেলাপি ঋণ আদায় ও প্রসারসহ প্রায় সবগুলো সূচকেই ব্যাংকটি উন্নতি করেছে। এই সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিংয়েও প্রতিষ্ঠানটি উন্নতি করেছে। ব্যাংকটি ২০১৬ সালে সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়িক সফলতার বছর পার করেছে। ফারমার্স ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩ জুন চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে দি ফারমার্স ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা ৫৬ এবং এটিএম বুথের সংখ্যা ১১টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটি মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৪ হাজার ৪১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত বছর প্রায় ১ হাজার ৮৩৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। এক্ষেত্রে এক বছরের ব্যবধানে ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০১৬ সালে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে ফারমার্স ব্যাংক। এ খাতে ৪৮০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ফারমার্স ব্যাংক প্রায় ৫০৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এ নিয়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট বিতরণ হওয়া ঋণের মধ্যে এসএমই খাতে ফারমার্স ব্যাংক প্রায় ১ হাজার ২৪৪ কোটি ৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে কৃষি খাতে ৬০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিতরণ করেছে ফারমার্স ব্যাংক। আমানত সংগ্রহে বিগত বছর অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে ব্যাংকটি। ওই বছর ব্যাংকের আমানত গ্রহণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এক বছরে প্রায় ১ হাজার ৫৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। এ নিয়ে ফারমার্স ব্যাংকের মোট আমানত সংগ্রহের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৬৩ কোটি ৬১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা ২০১৫ সালে ছিল ৩ হাজার ৪৮২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

 দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা স্থাপনের মধ্য দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহে নতুন দিগন্ত সূচনা করেছে বেসরকারি এ ব্যাংক। ২০১৬ সালে রেমিট্যান্স সংগ্রহে ফারমার্স ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫০ শতাংশ। বছরটিতে প্রায় ৩৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে ফারমার্স ব্যাংক, যা ২০১৫ সালে ছিল মাত্র ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

খেলাপি ঋণ আদায়েও প্রতিষ্ঠানটি সফলতা দেখিয়েছে। গত বছরের শুরুতে ২৭৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ থাকলেও বছর শেষে তা কমে ১৭১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। মন্দ ঋণের বিপরীতে মামলা করায় ঋণ আদায় আগের তুলনায় বেড়েছে। চলতি বছর শেষে আদায়ের হার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফারমার্স ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা, সম্পদের গুণগত মান ও বাজার ঝুঁকির প্রতি সংবেদনশীলতা সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা, উপার্জন ক্ষমতা ও তারল্য পরিস্থিতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। ব্যাংকটি মোট ৫২ শাখার মধ্যে ৩১টি লোকসানি শাখা রয়েছে। মূলত ঋণ বিতরণ ও আমানতের সমন্বয়ের কারণেই লোকসানি শাখার সংখ্যা বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) বলেন, আমাদের আমানতকারীদের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে সব সময় ভালো গ্রাহক দেখে ঋণ দিতে প্রত্যেক শাখাকে নির্দেশনা দিয়েছে। কৃষি, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দিতে বলা হয়েছে। সু-ঋণ বিতরণ ও গ্রাহকের আমানত সুরক্ষার মাধ্যমে সামনের দিনগুলোতে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি আরও ভালো হবে।

সর্বশেষ খবর