বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিশুদের ব্যাগে অন্য কিছু নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিশুদের ব্যাগে অন্য কিছু নয়

প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ব্যাগে সরকার অনুমোদিত বই ও উপকরণ ছাড়া অন্য কিছু না দিতে সবাইকে সতর্ক করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তাফা কামালের স্বাক্ষরে এক পরিপত্রে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ব্যাগে অনুমোদিত বই-উপকরণ ছাড়া অন্য কিছু বিদ্যালয়ে আনতে নিরুৎসাহিত করতে বলা হয়েছে। এ জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, আট বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপ-পরিচালক; জেলা, উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিশুদের জন্য যে সব বই অনুমোদন করেছে তা পরিবহনে কোনো ছেলেমেয়ের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যেসব ছাত্রছাত্রী ব্যাগে বই বহন করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে, হাই কোর্টের রায় অনুযায়ী তার ওজন বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি যেন না হয় সে বিষয়ে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। ‘ভারী ব্যাগ বহনের কারণে যাতে পিঠে ব্যথা বা সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মতো সমস্যা দেখা না দেয় সেজন্য অনুমোদিত বই, উপকরণ ছাড়া অন্য কিছু ব্যাগে করে বিদ্যালয়ের বয়ে আনা নিরুৎসাহিত করতে হবে।’ ব্যাগের ওজন শিশুদের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি যাতে না হয় পরিপত্রে তা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিচালনা পর্যদ এবং অভিভাবকদের বলা হয়েছে। প্রাথমিকে শিশুর শরীরের ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করতে ছয় মাসের মধ্যে আইন প্রণয়নে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন না করতে এবং করাতে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের সব স্কুলে ৩০ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করতেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। হাই কোর্টের নির্দেশনার পাঁচ মাস পর গত মে মাসেও শিশুদের ভারী ব্যাগ নিয়ে চলা ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

অনুসন্ধানে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির ২৫ শিক্ষার্থীর ব্যাগের ওজন করে তাদের গড় ওজনের ২৫ শতাংশের বেশি পাওয়া যায়।

সরকারের দেওয়া বইয়ের সঙ্গে স্কুল থেকে দেওয়া সহায়ক বই ও প্রতিটি বিষয়ের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনটি পর্যন্ত খাতা বা ডায়েরি মিলেছিল তাদের ব্যাগে। পাশাপাশি ব্যাগের ওজনের সঙ্গে যোগ হয় টিফিন বক্স ও কমপক্ষে ১ লিটার পানি।

আবার কারও কারও ক্ষেত্রে স্কুলের আগে-পরে কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য কোচিংয়ের সহায়ক বই ও খাতা থাকায় ওজন অতিরিক্ত হয়।

চিকিৎসকদের ভাষ্য মতে, ৫ বছরের একটি ছেলে শিশুর আদর্শ ওজন ১৮ দশমিক ৭ কেজি, আর মেয়ের ১৭ দশমিক ৭ কেজি। ৬ বছরের একটি ছেলে শিশুর আদর্শ ওজন ২০ দশমিক ৬৯ কেজি, আর মেয়ের ১৯ দশমিক ৯৫ কেজি।

সে হিসাবে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ব্যাগের ওজন সর্বোচ্চ ২ কেজি হওয়ার কথা (শরীরের ওজনের ১০ শতাংশ)। সেখানে ঢাকার খ্যাতনামা স্কুলগুলোর প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ব্যাগের ওজন সর্বনিম্ন ৪ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়। অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও হিসাবটা এরকমই।

 

অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগের কারণে শিশুরা মেরুদণ্ড ও হাড়ের বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে বেড়ে উঠছে বলে শিশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

সমাধান হিসেবে বই কমিয়ে আনা অথবা বিভিন্ন দেশের মতো বই-খাতা স্কুলে রেখে আসার ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ ওই শিশু বিশেষজ্ঞের।

এবার সরকার অনুমোদিত বই ও উপকরণের বাইরে কোনো কিছু না আনতে সতর্ক করে পরিপত্র জারি করা হলেও এতে সরকারের দেওয়া পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অনুমোদিত উপকরণ কোনগুলো সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

ঢাকায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক জি্য়াউল কবির দুলু সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষা উপকরণ বলতে কি বোঝানো হয়েছে পরিপত্রে তা স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে এটি লোক দেখানো বলেই মনে হচ্ছে।

‘বইয়ের কারণে তো ব্যাগের ওজন বাড়ে না। বইয়ের সঙ্গে প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য একটি করে খাতা বহন করতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন ধরনের ডায়েরি। এসব বহন করা বন্ধ করতে হবে।’

এ ধরনের পরিপত্র জারি না করে হাই কোর্টের নির্দেশনার আলোকে আইন করে শিশুদের ব্যাগ যাতে ভারী না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে বলেও মত দেন দুলু।

এদিকে হাই কোর্টের নির্দেশনায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আইনের খসড়া তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো কোনো অগ্রগতি নেই বলে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর