শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি নারীসহ ১২ শিক্ষার্থী কারাগারে

জবিতে ফাঁস প্রশ্নপত্র

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ১২ জনকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সকালে পরীক্ষা চলাকালীন বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাদের আটক করে। এরমধ্যে দুজন নারী পরীক্ষার্থী রয়েছেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদ এলাহি অভিযুক্তদের জবানবন্দির ভিত্তিতে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সাজাপ্রাপ্তদের প্রথমে শাহবাগ থানা পুলিশের হেফাজতে দেন ম্যাজিস্ট্রেট। পরে তাদের কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে দুজন নারী পরীক্ষার্থী রয়েছেন। অন্যরা হলেন- আল ইমরান, শাহ পরান, আবুল বাশার, নাহিদ হাসান, তানভীর হোসাইন, রফিকুল ইসলাম, খোন্দকার মিরাজুল ইসলাম, এস এম জাকির হোসাইন, আবু হানিফ ও নূরে আলম। এদের কাছে মুঠোফোন এবং এটিএম কার্ডের মতো যন্ত্র পাওয়া গেছে। পরীক্ষা চলাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজয়েট কলেজ, আহমেদ বাউয়ানি একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ থেকে দুজন করে এবং মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন থেকে একজন করে আটক করা হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী বলেন, এটিএম কার্ডের মতো যন্ত্রটির মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ করা যায়। তারা কানের মধ্যে একটি ছোট আকারের হেডফোন লাগিয়ে রেখেছিলেন এবং বাইরে থেকে কেউ প্রশ্নের উত্তর বলে দিচ্ছিল। গতকাল রাতে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের তত্পরতার কারণে এদের আটক করা সম্ভব হয়েছে। এর সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ ক্যাম্পাসের বাইরের ৮৭টি কেন্দ্রে একযোগে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা     পর্যন্ত এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি    পরীক্ষায় ১ হাজার ৭৬৫টি আসনের বিপরীতে ৮৯ হাজার ৫০৬ জন ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্তদের ছবি তুলতে গিয়ে প্রক্টরের লাঞ্ছনার শিকার দুই সাংবাদিক : দণ্ডপ্রাপ্তদের ছবি তুলতে গেলে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন ও রিপোর্টারকে লাঞ্ছিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) এম আমজাদ আলী। অবশ্য পরে তিনি সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে দুজন নারী রয়েছেন। তাদের কথা চিন্তা করে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ক্যামেরাপারসনকে ফুটেজ নিতে নিষেধ করেছিলাম। ’

জবিতে প্রশ্ন ফাঁস, আটক ২ : জবি প্রতিনিধি জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ১ ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন আয়শা আক্তার সোহা (রোল-১০৫৯১৮) এবং শাখাওয়াত হোসাইন (রোল-১০৬৯৭৭)। জানা যায়, জবির ভর্তি পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর বাইরে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের মোবাইলে কিছু একটা পড়তে দেখা যায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সন্দেহ হলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মেহেদী হাসান মিতুল (রোল-১০৮২৬৮) ও নাজমুল হাসানের  (রোল-১০৫৩১৭) কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে সেখানে উত্তরপত্র দেখতে পাওয়া যায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে উত্তরপত্রটির ও প্রবেশপত্রের ছবি তুলে তাদের প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসতে চাইলে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দানকারী কয়েকজন বাধা দেন। পরীক্ষা শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ উত্তরপত্রটির সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পান। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রধান ফটকে পরীক্ষার আগে ২ পরীক্ষার্থীর মোবাইলে উত্তরপত্র পাওয়া গেলে তাদের আটক করা হয়। এদের মধ্যে আয়শা আক্তার সোহার মোবাইলের ফেসবুক মেসেঞ্জারে ১.১৬ মিনিটে উত্তরপত্র পাঠানোর প্রমাণ পাওয়া যায়।

সাখাওয়াতের মোবাইলে ২.২৮ মিনিটে এ উত্তরপত্রের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি জাকারিয়া মিয়া বলেন, অধিকতর যাছাইয়ের মাধ্যমে মূল হোতাদের খুঁজে বের করা হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রুনা লাইলা আটক দুই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করেন। তাদের পরীক্ষার হলের বাইরে সাজেশনসহ আটক করায় পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া আটক না হওয়া মেহেদী হাসান মিতুল ও নাজমুল হাসানের পরীক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের মাধ্যমে বাতিল করা হবে।

সর্বশেষ খবর