মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে তৎপর জালিয়াত চক্র

২০০টি ডিভাইস ব্যবহারের শঙ্কা

মর্তুজা নুর, রাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২২-২৬ অক্টোবর। ভর্তি পরীক্ষাকে ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছে কয়েকটি জালিয়াত চক্র। ৪-৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে ভর্তিচ্ছুদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে এসব চক্র।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুত্ফর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, জালিয়াত চক্র যতই তৎপর হয়ে উঠুক না কেন, ভর্তি পরীক্ষায় কোনো রকম অসদুপায় অবলম্বন করা সম্ভব হবে না। সব রকম জালিয়াতি ঠেকাতে গোয়েন্দা এবং পুলিশ বাহিনী ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা কড়া নজরদারিতে রেখেছে। তাই ভর্তিচ্ছুদের এসব চক্রের ফাঁদে ধরা না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। গোপন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তর ও আশপাশের এলাকায় অন্তত চারটি জালিয়াত চক্র সক্রিয়ভাবে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রক্সি দেওয়া ও সূক্ষ্ম ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের উত্তীর্ণ হওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে ভর্তির সুযোগ পেলে ৪-৫ লাখ টাকা দেনদরবারের চুক্তি করা হচ্ছে। আর ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষার সনদপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, প্রবেশপত্র, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র জমা নিচ্ছে এসব চক্র। ভর্তি পরীক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন কার্ড পরীক্ষার্থীকে সঙ্গে রাখতে হবে- সে কারণে এই কার্ডটি তারা জমা নিচ্ছে না। সুযোগ পেলে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে এসব নথিপত্র ফেরত দেওয়ার চুক্তি করছে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জালিয়াতির জন্য একেকটি চক্র কয়েকভাবে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। চক্রের প্রধান কে, সে সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছে না জালিয়াতির ফাঁদে পা দেওয়া ভর্তিচ্ছুরা। মূল হোতার নির্দেশে প্রথম পর্যায়ে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ‘বড় ভাইয়েরা’। রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলার কোচিং সেন্টারগুলো কাজ করছে দ্বিতীয় পর্যায়ে। মূলত শিক্ষার্থী সংগ্রহের কাজ করছে ‘বড় ভাই’ ও ‘কোচিং সেন্টারের এজেন্টগুলো। কত টাকার বিনিময়ে এবং কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হবে তার সব হিসাব কষছে এরাই। ভর্তিচ্ছুদের বিভিন্ন রকম লবিং ও গ্রুপিংয়ের আশ্বাসও দিচ্ছেন এসব ‘বড় ভাই’ ও কোচিং এজেন্টরা। এমনকি ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হবে- এমন আশ্বাসও ভর্তিচ্ছুদের দিচ্ছে বলে প্রমাণ মিলেছে। আর প্রক্সি দেওয়ার জন্য ভাড়া করা হচ্ছে অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের। যারা প্রক্সি দেবে তাদের সঙ্গে ৪০-৫০ হাজার টাকা চুক্তি করছে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, প্রক্সির মাধ্যমে সুযোগ পাওয়ার জন্য অনেক ভর্তিচ্ছু নিজের ছবি ব্যবহার না করে অন্যের ছবি (যে প্রক্সি দেবে) তার ছবি ব্যবহার করার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার আগেই ছবিগুলো শনাক্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনকারীদের মধ্যে ৩০০টির মতো ‘জাল’ ছবি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। যারা নিজের ছবি ব্যবহার না করে অন্য ছবি ঘষা-মাজা করে ব্যবহার করেছিল তাদের কাছ থেকে নতুন করে ছবি নেওয়া হয়েছে বলে জানান আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম মোল্লা।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, রাবির এবারে ভর্তি পরীক্ষায় ডিভাইসের মাধ্যমে বড় ধরনের জালিয়াতি করার ছক আঁকছে বিভিন্ন জালিয়াত চক্র। ভর্তি পরীক্ষার আগে অন্তত ২০০টি ডিভাইস ঢাকা থেকে রাজশাহী শহরে ঢুকছে বলে তাদের কাছে তথ্য মিলেছে। এসব ডিভাইস নিয়ে দুটি গ্রুপ দুই ভাগে ভাগ হয়ে রাজশাহীতে ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে। ডিভাইসগুলো সূক্ষ্মভাবে কানের মধ্যে স্থাপন করা হয়। বাইরে থেকে ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করা হয় বলে জানা গেছে। এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় সব রকমের অনিয়ম ঠেকাতে রাবিকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে  সাজানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে গত রবিবার থেকে ভর্তিচ্ছুদের জালিয়াতির ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য মাইকিংসহ বিভিন্ন রকমের প্রচারণা শুরু হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের তিনটি ইউনিট ও একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক লুত্ফর রহমান।

সর্বশেষ খবর