বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

তোলারাম কলেজে শিক্ষককাণ্ড শুনে এমপির দুঃখ-লজ্জা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের কর্মবিমুখতার কাহিনী শুনে দুঃখ ও লজ্জা পেয়েছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য শামীম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৪)। অধ্যক্ষ মধুমিতা চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার ওই অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে এমপি শামীম ওসমান বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মঞ্চে ডেকে বলেন, ‘তোমাদের কোনো সমস্যা থাকলে এখানে বল।’ তখন শিক্ষার্থীরা পাঠদান সমস্যা, সুপেয় পানির অভাব ও অন্যান্য অসুবিধার চিত্র তুলে ধরেন। এদের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র মাহফুজুর রহমান তানভীর খুব স্পষ্ট করে বিভিন্ন অনিয়ম বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা যারা সরকারি কলেজে ভর্তি হই সবাই মধ্যবিত্ত অথবা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমরা তো এখানে লেখাপড়া করতে আসি। কিন্তু সপ্তাহের কোনো দিনও ছয়টি ক্লাস হয় না। তানভীর উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বন্ধুরা! আপনারাই বলুন, এখানে কি প্রতিদিন ক্লাস হয়?’ শিক্ষার্থীরা সমস্বরে জবাব দেয়, ‘না।’ আবার প্রশ্ন ‘বন্ধুরা! স্যারেরা কি আমাদের কাছ থেকে পড়া আদায় করেন?’ আবার সম্মিলিত কণ্ঠের জবাব ‘না।’ তানভীর বলেন, এই কলেজে যতজন বিসিএস ক্যাডার শিক্ষক আছেন কোনো বেসরকারি কলেজেও অত নেই। তাহলে আমাদের চেয়ে বেসরকারি কলেজের ফলাফল ভালো হয় কেন? এর কারণ একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষক বিভিন্ন দিন ক্লাস নিচ্ছেন। একজন শিক্ষকও পাঠদান করে আমরা যথাযথ পাঠ করেছি কিনা তা যাচাই করেন না।

আবার বক্তার প্রশ্ন, ‘বন্ধুরা! কোনো স্যার কি আপনাদের পাঠগ্রহণের মান যাচাই করেছেন?’ শিক্ষার্থীদের জবাব ‘না।’ ওই সময় শিক্ষার্থীরা বলতে থাকেন, ‘স্যাররা তো নিজেরা ব্যাচ খুলে প্রাইভেট পড়ানোয় ব্যস্ত। ক্লাসে পড়া দিয়ে পড়া নেওয়ার ফুরসত কোথায়? তারা বলতে থাকে, ‘আমরা রোজ ছয়টি করে ক্লাস চাই। একই বিষয়ে একজন করে শিক্ষক চাই।’নবীনবরণ অনুষ্ঠানে আগত অভিভাবক মহিদুল ইসলাম বলেন, তানভীরের মতো সাহসী ছেলে ঘরে ঘরে জন্ম নিক এটাই চাই। তিনি বলেন, মা-বাবার পরেই নাকি শিক্ষকের স্থান। কিন্তু তারা কি তা বোঝেন। তারা তো শিক্ষাদানকে ব্যবসা বানিয়ে ফেলেছেন। আজ ছেলেরা যা করল শিক্ষকদের লজ্জা থাকলে তারা অবশ্যই নিজেরা নিজেদের সংশোধন করে নেবেন।

অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান বলেন, যা শুনলাম তাতে আমি দুঃখিত-লজ্জিত। এই কলেজ যতটা উন্নত হওয়া উচিত তার ১০ ভাগও হয়নি।

ছাত্ররা যেসব সমস্যার কথা বলেছে, সেগুলো এখানে উপস্থিত ফ্যাসিলিটিস বিভাগের প্রকৌশলী শুনেছেন। আশাকরি তিনি এগুলোর দ্রুত প্রতিকার করবেন। যদি তা না করেন এবং শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিলিটিস বিভাগ ঘেরাও করে তখন আমার কিছু করার থাকবে না। সুপেয় পানি সমস্যা প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, রিয়াদকে (অনুষ্ঠানের সঞ্চালক নেতা হাবিবুর রহমান রিয়াদ) বলছি আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যতগুলো বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার দরকার এনে দিও।

সর্বশেষ খবর