শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

শেয়ারবাজারে ফের কারসাজির শঙ্কা

গোয়েন্দা প্রতিবেদন পেয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ দিলেন অর্থমন্ত্রী

মানিক মুনতাসির

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অসাধু চক্র দেশের শেয়ারবাজার নিয়ে আবারও কারসাজিতে মেতে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ব্রোকারেজ মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সজাগ দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ১৯৯৬ কিংবা ২০১০ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন কোনোভাবেই না ঘটে— সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করেই ঢাকা শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক ১৩৩ পয়েন্ট কমে যায়, যা ছিল গত তিন বছরের সর্বোচ্চ দর পতন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনার দিনই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই কর্তৃপক্ষ শীর্ষ ব্রোকারেজ মালিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে। পরে ডিএসই কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে কাউকে গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দেয়। পাশাপাশি বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের উচ্চ মহলকে শেয়ারবাজারে আবারও কারসাজি হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত সপ্তাহের শেষদিকে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন। জানা গেছে, শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি চার দফা সুপারিশ করেছিল ডিএসইসি। প্রস্তাবগুলো ছিল কস্ট প্রাইসে এক্সপোজার বিবেচনা, বন্ডে বিনিয়োগ এক্সপোজারের বাইরে দেখা, হাউসগুলোর নতুন শাখা খোলার অনুমতি, লেনদেন ডাটার গোপনীয়তা রক্ষা করা। পাশাপাশি আইসিবিকে আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নেরও নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে যে, শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মার্কিন শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামে। সেদিন দেশটির প্রধান শেয়ারবাজারের সূচক হঠাৎ করেই ১৬০০ পয়েন্ট কমে যায়। এতে সেখানকার বিনিয়োগকারীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ফলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বৈশ্বিক প্রভাবও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টিতে শেয়ারবাজারে কারসাজির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তারা বলেছে, সরকারের প্রতিটি সংস্থাকে সজাগ থাকতে হবে। বিশেষ করে শেয়ারবাজারে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাকে সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, যেন কোনো কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত না হয়। এতে যেন কেউ হস্তক্ষেপ করতে না পারে। এমন কি প্রযুুক্তিগত দিকগুলোকেও নজরে রাখতে বলা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ কয়েকদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা এখনো সুস্থ শেয়ারবাজার গড়তে পারিনি। এখানে অংশীজনরা শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা। এরাই ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে পতনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’ তাঁর মতে, যারা শেয়ারবাজারে কারসাজি করে তাদের খুঁজে পাওয়ার পরও বিচার করা যায় না। অনেক সময় এই কারসাজিকারীরা রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। তাদের কিছুই করা যায় না। বড় ধরনের দুই কারসাজি হওয়ার পরেও সেই হোতাদের কোনো বিচার হয়নি। ফলে আমাদের সব সময় সজাগ থাকতে হবে— যেন এ ধরনের কারসাজির ঘটনা আর না ঘটে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর