রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

বালুদস্যুরা আরও বেপরোয়া

বগুড়ায় তিন নদীর লুটপাট বন্ধ হয়নি, অভিযোগ করলে খেতে হয় পিটুনি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বালুদস্যুরা আরও বেপরোয়া

জয়শিং বাঙ্গালী নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বগুড়ার ধুনটে বালু উত্তোলন এখনো রোধ হয়নি। স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে ইচ্ছেমতো শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনে ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের জয়শিং ঘাটের বাঙ্গালী নদীর পাড়ে বসতবাড়ির ভিটেমাটিসহ ফসলি জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে। নদীর পাড় কোনো কোনো স্থানে ভেঙে নদীতে মিশে গেছে। নদী এলাকার কোনো কোনো জমি ডেবে গেছে। এলাকাবাসী নদী থেকে বালু উত্তোলন রোধে স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার জানালেও কোনো কাজের কাজ হয়নি। বরং বালু দস্যুরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগ করায় কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করেছে বালু দস্যুরা।  বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বাঙালি, যমুনা ও ইছামতি নদী। এই নদীগুলো এখন এই উপজেলার কতিপয় রাজনৈতিক নেতার ব্যক্তিগত সম্পদ আহরণের ক্ষেত্র। দলের পদ বাগিয়ে নিয়ে তারা নদীতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে শত শত ট্রাক। প্রতিদিন উপজেলা থেকে প্রায় ২০০ ট্রাক বালু উত্তোলন হয়ে থাকে। ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের জয়শিং গ্রামের ফরহাদ হোসেন জয়শিং ঘাটের বাঙ্গালী নদীতে গত ছয় মাস ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন।

তিনি নিজেকে দলীয় পরিচয় দিয়ে নদীতে একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে পাইপের সাহায্যে নদীর পশ্চিম ও পূর্বপাশে জমা করছেন। সেখান থেকে প্রতি ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। সরকারি অনুমোদন না থাকার পরও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ‘জয়শিং ফেরিঘাট বালু পয়েন্ট’ নামে ক্যাশমেমো প্রদান করা হচ্ছে বালু ক্রেতাদের।

শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কম থাকায় এবং নদীর গভীর তলদেশ থেকে এভাবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর গভীরতা সৃষ্টি হয়ে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। এতে নদীর তীরবর্তী মানুষের বসতবাড়ি ও ভিটেমাটিসহ ফসলি জমিগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে এলাকাবাসী বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে ক্ষিপ্ত হয়ে বালু ব্যবসায়ীরা অভিযোগকারী কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করেছে। নিমগাছী ইউনিয়নের সোনাহাটা নান্দিয়ারপাড়া ও চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের দীঘলকান্দি এলাকার বাঙ্গালী নদীতেও একই ভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার ফলে নদীর আশপাশের জমি ডেবে যেতে শুরু করেছে। কোনো কোনো স্থানে নদীর পাড় ভেঙে গেছে।

জয়শিং গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, অব্যাহত বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীর তীরবর্তী তাদের বসতঘরগুলো এখন হুমকির মুখে পড়েছে। তবে এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেওয়ায় বালু ব্যবসায়ী ফরহাদ ও তার লোকজন ১০ গ্রামবাসীকে পিটিয়ে আহত করেছে। কিন্তু তারপরও প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বালু ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারিভাবে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

বগুড়ার ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, বাঙ্গালী নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বালু উত্তোলন করাকে কেন্দ্র করে মারধরের বিষয়টি কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি, মৌখিকভাবে জানা গেছে। অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বালু উত্তোলন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর