মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাট ধ্বংসের জন্য একটি মহল এখনো তত্পর

—পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাট ধ্বংসের জন্য একটি মহল এখনো তত্পর

দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে পাট দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি। পাট ধ্বংসের জন্য একটি মহল এখনো তত্পর দাবি করে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার দুই বছরেও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়নি পাট। আমি মন্ত্রী হয়েও টেবিলে টেবিলে ঘুরেছি। শুধু চিঠি চালাচালির মধ্যে সময় পার হয়েছে।  এজন্য মূলত অর্থ মন্ত্রণালয় দায়ী। বাংলাদেশ থেকে আর কাঁচা পাট রপ্তানি নয়, পাটজাত পণ্য রপ্তানি করা হবে। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথভাবে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ‘পাটের উন্নয়ন : গণমাধ্যমের ভাবনা’ শীর্ষক এই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক।

গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সামসুল আলম, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসান, জুট ডাইভারসিফাই প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) নির্বাহী পরিচালক রিনা পারভিন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ প্রমুখ। ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরোপ্রধান শফিকুল আলম। সমাপনীতে ধন্যবাদ বক্তব্য দেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, বিশ্বব্যাংকের কিছু প্রেতাত্মা এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে নির্দেশনা দিয়েছেন পাটের বহুমুখী প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের জন্য দুই বছর ধরে ফাইল চালাচালি হচ্ছে, আমি মন্ত্রী হয়েও টেবিলে টেবিলে ঘুরেছি। একজন কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক এটা দেখছেন। একবার বাংলাদেশ ব্যাংক, একবার কৃষি মন্ত্রণালয়, একবার অর্থ মন্ত্রণালয় ঘুরছেন।

ঘুরপাকের মধ্যে দুই বছর কেটে গেছে।

তিনি বলেন, এটা এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলে আছে। কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে পাটকেই প্রথম প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য করা হচ্ছে, যার জন্য এত গবেষণা হচ্ছে। অথচ আরও ৪০টি প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রয়েছে। এসব পণ্যে ২০ শতাংশ ইনসিটিভ পাচ্ছে। আগামীকাল জাতীয় পাট দিবসে দুই বছরের চিঠি চালাচালির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে। অর্থমন্ত্রী মনে হয় পাটের প্রতি একটু বিরূপ।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পাটের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছে। ’৭৫-পরবর্তী সময়ে পাটকে ধ্বংস করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিজেএমসির মিলগুলোকে বেসরকারিকরণের নামে ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করা হয়। শর্ত থাকলেও কেউ মিল চালু করেনি। বরং গাছপালা, ঘরবাড়ি বিক্রি করে জায়গা ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়। তার মতে, ৯০ ভাগ বীজ ভারত থেকে এনে পাট চাষ করতে হয়। কিন্তু ’৭৫-এর আগে বাংলাদেশের এই অবস্থা ছিল না। পাটবীজ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল, ওই সময় পাট চাষের বীজ আমরা উৎপাদন করতাম। ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় মিল বন্ধ ও চাষিদের বীজ উৎপাদনে নিরাশ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে মির্জা আজম বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ আদমজী জুট মিল ২০০২ সালে খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তখন মিল বন্ধ করতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে অর্থসহায়তা দিয়েছে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য। কিন্তু একই সময়ে পাশের ভারত সরকারকে নতুন পাট মিল চালু করতে অর্থসহায়তা দিয়েছে। আদমজী মিল থেকে আড়াই লাখ বেল পাট রপ্তানি হতো, সেটা বন্ধ করতে খালেদাকে টাকা দিল বিশ্বব্যাংক আর ভারতকে সেই আড়াই লাখ বেল পাট উৎপাদনের জন্য টাকা দেওয়া হলো। এটাই ছিল বিশ্বব্যাংকের চক্রান্ত।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর বন্ধ মিল চালু করেছে শেখ হাসিনা সরকার। ৬টি পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এর পরই পাটের যে অগ্রগতি, তা সম্ভব হয়েছে। অগ্রগতির পথে ধাক্কা কম আসেনি। ২০১৪ সালে হঠাৎ ভারত রপ্তানিকৃত কাঁচা পাটে বিধিনিষেধ জারি করে। তবে তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। গত তিন বছরে পাটের অগ্রগতি হয়েছে। কাঁচা পাট উৎপাদন হয়েছে ২০১৫ সালে ৬৮ লাখ বেল ও ২০১৭ সালে ৮৫ লাখ বেল।

মির্জা আজম বলেন, আমরা পাটজাত পণ্যের বহুমুখীকরণে কাজ করছি। গত বছর পাটপণ্যের বহুমুখীকরণের তালিকা পেয়েছিলাম ১৩৫টি, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তা ২৪০-এ এসে দাঁড়িয়েছে। এ সময় মন্ত্রী ঘোষণা করেন, আগামী বছর থেকে পাট নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর সেরা রিপোর্টার পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কার তুলে দেবেন।

সর্বশেষ খবর