রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুময় সারা দিন

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধুময় সারা দিন

স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। তার হাত ধরেই এদেশের মুক্তিকামী মানুষ শোষণের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পায়। মুক্তির অধিকার আদায়ের প্রত্যয়ে তিনি দীপ্ত কণ্ঠে দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। নানা আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করেছে রাজধানীসহ গোটা দেশ।

শিল্পকলা একাডেমি : ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা। শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ছোট্ট সোনামণিদের ভিড়। হৈ-হুল্লোড় আর কলকাকলীতে মুখরিত একাডেমি প্রাঙ্গণ। কেউ ছোটাছুটি করছে আবার কেউ শান্তভাবেই অভিভাবকের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সবার হাতেই ছবি আঁকার অনুষঙ্গ রং আর পেনসিল। একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে স্থাপিত আড়াই হাজার বর্গফুট ক্যানভাসে শিশুরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আঁকলেন এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা কথার ফুলঝুরি তুলে ধরলেন তাদের অঙ্কনে।

সহস্রাধিক শিশুর চিত্রাঙ্কনে আর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি অঙ্কনে ভিন্ন এক রূপ পেল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। মাঠে চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ক্লাউন শো, মুখোশ নাট্য ও অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনীসহ শিশুদের ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

অনুষ্ঠানে ৭ মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতায় ঢাকা মহানগরীর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রথম স্থান অধিকারী খন্দকার ছুমাইরা আক্তার পরিবেশন করে ৭ মার্চের ভাষণ, আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩০০ শিক্ষার্থীর পরিবেশনায় সমবেত সংগীত ধনধান্যে পুষ্পে ভরা, মানিকনগর মডেল হাইস্কুলের ২৫০ শিক্ষার্থীর পরিবেশনায় লিয়াকত আলী লাকীর কথা ও সুরে সমবেত সংগীত এ মাটি নয় জঙ্গিবাদের, এস ও এস শিশু পল্লীর পরিবেশনায় সমবেত নৃত্য পরিবেশিত হয়। জন্মদিনের এই আয়োজনে একক সংগীত পরিবেশন করে শিশুশিল্পী সেজুতী, সোমা ও নীতু।

 এ ছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে বিভিন্ন সময়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে দেশব্যাপী চিত্রাঙ্কন বিজয়ী ২৮ জন শিল্পী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী চিত্রাঙ্কন বিজয়ী ৩১ জন শিল্পী, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৭ উপলক্ষে দেশব্যাপী চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ৩১ জন শিল্পী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী চিত্রাঙ্কন বিজয়ী ১২ জন শিল্পী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীর শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১২ জন শিল্পী, মিতসুবিশি এশীয় শিশুদের সচিত্র দিনলিপি (এনিক্কি ফেস্টা) ২০১৫-১৬ জাপানে মূল প্রতিযোগিতার জন্য ৮ জন ও বাংলাদেশে প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচিত ৩৪৪ জন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার প্রদান করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি ও একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

এদিকে বিজয়ী শিশুশিল্পীদের চিত্রকর্ম নিয়ে গতকাল  একাডেমির ১ নং গ্যালারিতে শুরু হয়েছে ১০ দিনের চিত্র প্রদর্শনী। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসের দিনব্যাপী আয়োজনে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’।

 

বাংলা একাডেমি

বড়রা বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনালেন আর ছোটরা শুনলেন গভীর মনোযোগের সঙ্গে। ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনো’ শীর্ষক শিশু-কিশোর অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও সংগ্রামী জীবন চিত্রিত হয়। এই গল্প শোনার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি।

বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনার এই আসরে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

বেলা ১১টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনো’ শীর্ষক এই আয়োজনে শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনান তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, অধ্যাপক মেরিনা জাহান এবং শমী কায়সার।

এতে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।

অন্যদিকে বিকাল ৪টায় একাডেমির নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : শোষিত-বঞ্চিত মানুষের নেতা’ শীর্ষক একক বক্তৃতানুষ্ঠান।

এতে একক বক্তৃতা প্রদান করেন কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।

 

কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা

আলোচনা সভা, পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা।

বিকালে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে বক্তৃতা করেন মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য ও মেলার সহ-সভাপতি কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ডি ডি ঘোষাল এবং শিশু বক্তা নুসাইবা তাহসিন।

শিশু সভাপতি হিসেবে বক্তৃতা করেন মেলার কর্মী মিমহা বিনতে মুনির।

অনুষ্ঠানে জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা এবং ১৬৭, ১৬৮ ও ১৬৯তম সাহিত্য আসরের ত্রৈমাসিক মূল্যায়নে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা।

সবশেষে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় অংশ নেয় মেলার সুরবিতান, নৃত্যবিতান ও কথাবিতানের সদস্যরা।

 

জাতীয় জাদুঘর

কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করেছে জাতীয় জাদুঘর।

সন্ধ্যার এই আয়োজনে কবিতা পাঠ করেন আজিজুর রহমান আজিজ, নূহ-উল-আলম লেলিন, জাহিদুল হক, শিহাব সরকার, ইকবাল আজিজ, অঞ্জনা সাহা, ফারুক মাহমুদ, গোলাম কিবরিয়া পিনু, আনিসুল হক, আমিনুর রহমান সুলতান, রাসেল আশেকী প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর