শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজার, বর্তমান ঢাকা!

জন্ম সনদ তুলছে রোহিঙ্গারা, সক্রিয় মানব পাচারকারীরা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজার, বর্তমান ঢাকা!

স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজার এবং বর্তমান ঠিকানা ঢাকা দেখিয়ে জন্ম সনদ তুলছে রোহিঙ্গারা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-২ থেকে এরকম দুটি জাল সনদ গ্রহণ করার প্রমাণ পেয়েছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। এ বিষয়ে উপ-রেজিস্ট্রার জেনারেল (যুগ্ম-সচিব) মো. মাহবুব-উল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠি ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়েছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (স্মারক নম্বর : ৪৬.০৪.০০০০.১০১.২৭. ০০২.১৭-২৩১) এক চিঠিতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে ফোনে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে ভুয়া সনদের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়। কক্সবাজার থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে দেখা যায়, ১৯৯১১২২১১৬১০০২৭৫০৫ ও ১৯৯৪২২১১৬১০০ ২৭৫০৫ জন্ম সনদ দুটিতে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে কক্সবাজার জেলার নাম উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এই জন্ম সনদ দুটি ইস্যু করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-২ থেকে। রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিস থেকে জন্ম সনদ দুটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সনদ দুটির জন্ম নিবন্ধন নম্বরের শেষ ৬ অঙ্ক একই (০২৭৫০৫)। সনদ দুটি একই বই এবং একই পাতায় লিপিবদ্ধ। কিন্তু একই পাতায় দুটি সনদের সিরিয়াল নম্বর একই রকম হওয়া সম্ভব নয়। এ কার্যালয়ে রক্ষিত ড্যাটাবেজের ব্যাক আপ-এ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ডিসিসি অঞ্চল-২ এর বই নম্বর ১, পাতা নম্বর ১৪৭ তে ওই দুই জন্মনিবন্ধন ছাড়া অন্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জন্ম সনদ দুটির এরিয়া কোড ২২১১৬১০। যা কক্সবাজার জেলার বদরখালী ইউনিয়নের এরিয়া কোড। অথচ জন্ম সনদ দুটি ডিসিসি অঞ্চল-২ থেকে ইস্যু করা হয়েছে। জন্ম সনদ দুজন আলাদা ব্যক্তির অথচ তাদের বর্তমান ঠিকানা একই। হারুনর রশীদ নামে এক ব্যক্তির জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯১ সালের ৪ নভেম্বর। তার জন্মস্থান উল্লেখ করা হয়েছে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার বদরখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন মুহুরীর জোরা পাড়া গ্রামে। আরেকজনের জন্ম সনদ উত্তোলন করা হয়েছে মোহাম্মদ হোছাইন নামে। তার জন্মস্থান উল্লেখ করা হয়েছে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার বদরখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন তেচ্ছা পাড়া গ্রামে। তার জন্ম সাল উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯৪ সালের ৮ নভেম্বর। এই দুই ব্যক্তির বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ১৭/২ ডি.সি রায় রোড, ঢাকা। একই বর্তমান ঠিকানায় এই দুই ব্যক্তির সনদ উত্তোলন করা হয়েছে।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) প্রশাসন শাখা সূত্রে জানা যায়, সারা দেশের সব ইউজার আইডি এ পুরাতন বইতে ডাটা এন্ট্রির সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত বছরের ১১ ডিসেম্বর পুরাতন বইতে ডাটা এন্ট্রির সুযোগ রাখার অনুরোধ জানায়। ডিসিসির অনুরোধের পরিপ্র্রেক্ষিতে তাদের আওতাধীন ইউজার আইডিতে পুরাতন জন্ম নিবন্ধন ডাটা এন্ট্রির সুযোগ রাখা হয়। এ ছাড়া পর্যাপ্ত সতর্কতার সঙ্গে ডাটা এন্ট্রি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, ওই দুটি জন্ম নিবন্ধন সনদসহ আরও কয়েকটি জন্ম নিবন্ধন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা বহির্ভূত অন্য এলাকার এরিয়া কোড ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের ইউজার আইডি : ডিসিসি কোরবান থেকে ইস্যু করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তির জন্ম সনদ থাকলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলেও পাসপোর্ট তৈরি করা যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারীরা। রোহিঙ্গাদের ভুয়া সনদ তৈরি করে মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করছে সিটি করপোরেশনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর