শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
নির্বাচনী আমেজ বাড়ছে দুই সিটিতে

গাজীপুরে চাঙ্গা আওয়ামী লীগ বিএনপির মাথাব্যথা জামায়াত

সিটি করপোরেশন নির্বাচন

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে জাতীয় পার্টি সমর্থন দেওয়ায় দলের মধ্যে চাঙ্গা ভাব বিরাজ করছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এবং মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ ছানাউল্লাহকে নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথা শুরু হয়েছে। এদিকে গতকাল জুমার নামাজের দিন আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীই এক মসজিদে এক জামাতে নামাজ পড়েছেন। আওয়ামী লীগকে সমর্থনের ব্যাপারে গতকাল জাপার ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার মিয়া জানান, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গত বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কাজ করার জন্য টেলিফোনে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও তিনি জানান। জানা গেছে, এ নির্দেশনার পর থেকেই দলটির গাজীপুর জেলা ও মহানগরের নেতা-কর্মীরা জাহাঙ্গীর আলমের সিটি করপোরেশনের ছয়দানা বাসভবনে দেখা করেছেন। জাপার এ সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। আরেক দিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এবং মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ ছানাউল্লাহকে নিয়ে বিএনপিতে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন জামায়াতের এই প্রার্থী। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নানকে সমর্থনের পাশাপাশি নির্বাচনের মাঠে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিল। এবারের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ মো. ছানাউল্লাহ জানান, বিগত দিনে দেশের সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। জামায়াতের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীক ও পরিচয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। তবে দলের স্বার্থে ও দলকে আরও সুসংগঠিত করতে কেন্দ ীয় জামায়াত নেতারা তাকে সমর্থন দিয়েছেন। গাজীপুর মহানগর বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও বিএনপির মহানগর কমিটি গঠিত হয়নি। সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান ৩০ মামলায় প্রায় ২২ মাস কারাগারে ছিলেন। ২০১৬ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহের মৃত্যুর পর গাজীপুর মহানগর বিএনপি অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে। নগরীর বিএনপির কিছু নেতাকর্মী এরইমধ্যে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। অপরদিকে ঝড়-ঝাপ্টার পরও জামায়াত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। তাদের মহানগর কমিটি গঠিত হয়েছে। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ ছানাউল্লাহ থাকলে বিএনপির ভোট ব্যাংকে এর বড় প্রভাব পড়বে। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাবে। সেজন্য ২০দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

দুই মেয়র প্রার্থীর জুমার নামাজ আদায় : প্রধান দুই দলের মেয়র প্রার্থী গতকাল একই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষে তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের খতিব মোনাজাত করেন। মুসল্লীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে আসেন। মসজিদের খতিবের বয়ান শেষ হলে হাসান উদ্দিন সরকারকে মুসল্লিদের উদ্দেশে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। হাসান সরকার প্রায় দুই মিনিট বক্তৃতাকালে প্রথমে মসজিদের দাতা পক্ষের জন্য ও অসুস্থ্য মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানসহ এলাকার অসুস্থ মুরব্বি ও মৃত ব্যক্তিদের জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। তবে তিনি নির্বাচনী বা রাজনৈতিক কোনো বক্তৃতা দেননি। হাসান সরকারের বক্তৃতা শেষ হলে খতিব জুমার খুতবার জন্য দাঁড়ান। এসময় দুপুর ১টা ২৩ মিনিটের দিকে মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনিও প্রায় দুই মিনিট বক্তৃতা করেন। বক্তৃতার শুরুতে তিনি রাস্তা ঘটের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন এবং নিজের জন্য সবার কাছে দোয়া চান। নামাজ শেষে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ আবদুল মালেক মোনাজাত করেন। শেষে দুই মেয়র প্রার্থীই পরস্পর কুশল বিনিময় করেন। এ সময় হাসান সরকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নির্বাচনী বিধিবিধান মেনে নির্বাচনী প্রচারণা করার জন্য জাহাঙ্গীরকে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ১৯৭১ এই এলাকা থেকেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলাম। তখন স্লোগান ছিল ‘জয়দেবপুরের পথ ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’ আবারা এখান থেকে শেষ যুদ্ধ শুরু করতে এসেছি। আবারও যেন সেই স্লোগান হয়, ‘জয়দেবপুরের পথ ধর গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধার কর।’ মসজিদে হাসান সরকারের সঙ্গে জুমার নামাজে শরিক হন গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহমেদ, বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন চৌধুরীসহ দলীয় নেতারা। অপরদিকে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর