বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

সেই ভবন এখন শুধুই ‘ক্যান্টিন’

বাইজিদ ইমন, চবি প্রতিনিধি

সেই ভবন এখন শুধুই ‘ক্যান্টিন’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ভবন এক সময় ছিল ছাত্র রাজনীতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব করতেন চাকসু নেতারা। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে চাকসু প্রতিনিধিরাই কার্যকর ভূমিকা পালন করতেন। কিন্তু ২৮ বছর ধরে বন্ধ চাকসু নির্বাচন। ফলে স্বর্ণালি সেই সময়ের মতো মুখরতা নেই। তৈরি হচ্ছে না নতুন নেতৃত্ব। উল্টো চাকসু ভবনটি এখন ব্যবহার হচ্ছে ক্যান্টিন হিসেবে। তাছাড়াও যেখানে রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের অফিস। সবমিলে অবসরে আড্ডার স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এই ক্যান্টিন।

চাকসুতে গিয়ে দেখা গেছে, তিনতলা বিশিষ্ট এই ভবনের নিচতলায় রয়েছে খাবারের ক্যান্টিন। দ্বিতীয় তলায় চলে ইনডোর গেমের আসর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম। তৃতীয় তলায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অফিস। অনেকটা প্রাণহীন নিথর একটি ভবনে পরিণত হয়েছে এক সময়ে সরগরম থাকা দালানটি। চাকসু কেন্দ্র পরিচালনার জন্য পরিচালক ও সহকারী পরিচালকসহ ১২-১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও সবকিছু অনেকটাই নির্জীব।  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চাই চাকসু নির্বাচন হোক। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে সেগুলো অনতিবিলম্বে দূর করে চাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত। এটি কোনো ছোটখাটো কাজ নয়, এটি অনেক বড় একটি কর্মযজ্ঞ।’  চাকসুর বর্তমান ভিপি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘নিয়মিত নির্বাচন না হওয়ার ফলে নবীন শিক্ষার্থীরা চাকসু সম্পর্কে অবগত নয়। এই ২৮ বছরে ১৪ বার নির্বাচন হতো, চাকসুর একটা ইমেজ তৈরি হতো। বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতেন চাকসুর নেতারাই। তখন সব শিক্ষার্থীরাই চাকসু সম্পর্কে জানতেন। বর্তমানে চাকসুর তো কোনো কার্যক্রম নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা এটিকে ক্যান্টিন হিসেবেই চিনছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমিও চাই চাকসু নির্বাচন হোক। তাই আমার দাবি, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে চাকসু নির্বাচন দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরির পথ সুগম করা হোক।’ জানা গেছে, ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত চাকসুর নির্বাচন হয় মাত্র ছয় বার। প্রথম কেবিনেট নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। এরপর নির্বাচন হয় ১৯৭১ সালে। পরে ১৯৭৩ ও ১৯৮০ সালে পরবর্তী দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। চাকসুর প্রথম ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং সর্বশেষ ভিপি হন মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। তবে ছাত্র ঐক্য নেতা ফারুকুজ্জামান নিহত হওয়ার পর চাকসুর কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আর নির্বাচন হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতি বছর চাকসুর পেছনে ৬ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও তার প্রকৃত হিসাব মেলা ভার। বিগত সময়ের প্রশাসনও চাকসু নির্বাচনের বিষয়ে একই কথা বলেছেন। পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন তারা সবাই। কিন্তু সব সময় সেই আশ্বাস থেকে গেছে আশ্বাসই। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রশাসনের আশ্বাসকে কার্যকর হিসেবে দেখতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের মূল দাবি— চাকসু নির্বাচন। সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন নির্বাচনের দাবি তাদের।

সর্বশেষ খবর