একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জনকূটনীতিতে দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যার কূটনীতি নির্ভর করছে দেশটির জনকূটনীতি পরিচালন ক্ষমতার ওপর। আর অতীতে জনকূটনীতি দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতে মুন্সি আফতাব উদ্দীন ও আবদুল হাফিজ ট্রাস্ট ফান্ডের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণহত্যা কূটনীতি : অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও কেন বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি তা একটি মৌলিক প্রশ্ন। এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বাংলাদেশের মতো আরও অনেক দেশেই গণহত্যার ইতিহাস আছে। একটি বিশেষ দিবসকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। এ ছাড়া গণহত্যার স্বীকৃতির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি সব সময় সচেষ্ট ছিল। পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক স্বার্থের কারণে গণহত্যার মতো বিষয়কে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে গণহত্যা একটি অপরিহার্য বিষয়। সবাইকে রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য তৎপর হওয়া আবশ্যক।
এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারের কার্যক্রম গণহত্যা কূটনীতির ফলে আরও শক্তিশালী হবে।ড. দেলোয়ার বলেন, সমৃদ্ধ জ্ঞান ও তথ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে পরিচালিত হতে পারে গণহত্যা কূটনীতি। বাংলাদেশের কূটনীতিকরা ক্রমাগত গণহত্যার দিকটি বহির্বিশ্বে তুলে ধরবেন। গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধ ও আজকের বাংলাদেশ এক সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের বন্ধপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহ থেকে বাংলাদেশের গণহত্যার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি অর্জনের জন্য দ্বিপক্ষীয় কূটনীতি পরিচালনা করা যেতে পারে। তবেই সার্থক হবে বাংলাদেশের গণহত্যা কূটনীতি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুন্সি আফতাব উদ্দীন ও আবদুল হাফিজ ট্রাস্ট ফান্ডের সভাপতি অধ্যাপক আহমেদ আবদুল্লাহ জামাল। এ সময় ট্রাস্টের আহ্বায়ক মো. আবদুর রহিম উপস্থিত ছিলেন।