শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

অনুমতি ছাড়াই হচ্ছে নতুন নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

অনুমতি ছাড়াই হচ্ছে নতুন নিয়োগ

বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) ২৭৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বন্ধ করে দেওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে আড়াই মাস আগে দায়িত্ব নেওয়া মেয়রের বিরুদ্ধে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ২৭৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বন্ধ রাখা হলেও তাদের দিয়ে নিয়মিত কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে মেয়র নিজের জন্য সহকারী একান্ত সচিবের পদ সৃষ্টি করে একজন এবং দুইজন কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়েছেন। এ নিয়ে বেতন না পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বকেয়া প্রদান এবং চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে এবং নতুন নিয়োগ প্রদানের প্রতিবাদে ২৭৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সোমবার সকাল ১০টা থেকে ৪ ঘণ্টা সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। একই দাবিতে বুধবার তারা পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করেন বলে বেতন না পাওয়া কর্মকর্তা রাফিউর রহমান রাফি জানিয়েছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই আমি তিনটি পদে অস্থায়ী নিয়োগ দিতে পারি। সে ক্ষমতাবলে নিয়োগ দিয়েছি। আমি চলে গেলে তারাও চলে যাবে। এখানে অনিয়মের কিছু হয়নি। এ ছাড়া ২৭৬ জনের নিয়োগ বিধিসম্মত হয়েছে কিনা তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিধিমালা অনুযায়ী যাদের চাকরি হয়েছে তারা বেতন পাবেন। অন্যদের চাকরি থাকবে না। তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আকতার হোসেন আজাদ বলেন, স্থায়ী ও অস্থায়ী পদে জনবল নিয়োগ দিতে গেলে অবশ্যই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। মেয়র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই তিনজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। এটা বিধিসম্মত হয়নি। একক সিদ্ধান্তে নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ারও মেয়রের নেই। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির রংপুর পৌরসভাকে ২০১২ সালের ২৮ জুন সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। ৪৮১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ২০৫ জনের চাকরি স্থায়ী হলেও ২৭৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অস্থায়ী রয়ে গেছেন। এদের মধ্যে রংপুর পৌরসভার মেয়র থাকাকালে আবদুর রউফ মানিক ১১৫ জন এবং সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টুর আমলে ১৬১ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর কেউ ১০ বছর আবার কেউ ৫ বছর ধরে নিয়মিত বেতন-ভাতা ভোগ করে আসছিলেন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ১৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪ মার্চ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন প্রদান করেন।

 বিধিসম্মতভাবে নিয়োগ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ২৭৬ জনের বেতন বন্ধ করে দেন। জনবল কাঠামো অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিনা তা তদন্তে ৫ মার্চ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আকতার হোসেন আজাদকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি করে দেন মেয়র। এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি। এদিকে সিটি করপোরেশনের জনবল কাঠামোতে মেয়রের দফতরে দুইজন কর্মকর্তার পদ রয়েছে। মেয়র উপমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পেলে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে একজন একান্ত সচিব পাবেন।

না হলে একজন ব্যক্তিগত সহকারী পাবেন। ব্যক্তিগত সহকারী থাকলেও মেয়র তার একক সিদ্ধান্তে সহকারী একান্ত সচিবের পদ সৃষ্টি করে ৪ এপ্রিল জাহিদ হোসেন লুসিড নামে একজনকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা বেতনে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়েছেন। তবে নিয়োগের কার্যকর তারিখ দেখানো হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। কার্যকরের তারিখ থেকে লুসিডকে বেতনও প্রদান করা হয়েছে। একই দিনে পরিচ্ছন্নকর্মী পদে মরজিনা বেগম এবং কর্মচারী পদে শাহাদৎ হোসেনকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ।

বেতন না পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিন মাস ধরে বেতন না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে মেয়র কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মেয়র কী সিদ্ধান্ত নেন তা দেখার পর আইনের আশ্রয়সহ কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে জানান তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর