শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মৃত্যু মিছিলের নেপথ্যে নির্বাচনী রাজনীতি

প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ মানুষের

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম শহরের রীমা কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানির ভিড়ে নয়জনের মৃত্যুর শোক না কাটতেই সাতকানিয়ার নলুয়া গ্রামে ইফতারি ও জাকাতসামগ্রী নিতে গিয়ে নয়জন নিঃস্ব মহিলার মৃত্যুতে শোকের পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ মানুষ। কোনো কোনো সূত্র নিহতের সংখ্যা ১০ বলছে। বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ড. এম এম মনিরুজ্জামান এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ইফতারি ও জাকাতসামগ্রী বিতরণে এত মানুষের জমায়েত, অথচ পুলিশ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনকে আগে কিছুই জানানো হয়নি। ঘটনাটির বিষয়ে মামলাসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ডিআইজি। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানান, অত্যধিক ভিড়ে হিটস্ট্রোকেই এই প্রাণহানি ঘটে। শুধু সাতকানিয়ার নয়, কক্সবাজারসহ দূরদূরান্ত থেকেও লোকজন এসেছিলেন কেএসআরএম গ্রুপের এসব সামগ্রী নিতে। সর্বোচ্চ ১০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্থানে ৩০-৩৫ হাজার মানুষের ভিড় হয়েছিল বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, এলাকাটিতে প্রবাসী বা বিত্তবানের সংখ্যা কম না হলেও হঠাৎ ইফতারি আর জাকাতসামগ্রী নিতে কেন হল এত মানুষের ভিড়? স্থানীয়রা জানান, ইফতারিসামগ্রী নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়নি। সাতকানিয়া কিংবা গোটা দক্ষিণ চট্টগ্রামে নিঃস্ব মানুষের সংখ্যা এত বেশি! তা অবিশ্বাস্য। কোনো জননেতার বাড়ি নয়, নয় মন্ত্রী-এমপির বাড়ির উঠান, নিকট অতীতেই হাইব্রিড শিল্পপতির চৌকাঠে হঠাৎ করেই কেন এত মানুষের ভিড়? কীভাবে সম্ভব? এমন নানা প্রশ্ন জনমনে। স্থানীয়রা ভাবছেন নানা কথা। অনেকে স্মৃতিকাতর হয়েছেন। ফিরে গেছেন এক দশক আগে। সে সময় অভিন্নভাবেই একই প্রতিষ্ঠানের সামগ্রী বিলিবণ্টনকালে ছয়জনের প্রাণহানি ঘটে। মধ্যখানে বিরতি দিয়ে এক দশক পরে আবার একই মৃত্যুর মিছিল! তবে  কি এবার এই আয়োজনের আড়ালে ছিল অন্য কিছু? সামনের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তবে কি কোনো রাজনৈতিক দল এই ইফতারিসামগ্রী বিলিকে ঘিরে তাদের সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করেছে? রাজনীতিসম্পৃক্ত এমন প্রশ্ন স্থানীয়রা উড়িয়ে না দেওয়ার কারণও আছে। তারা জানান, এলাকাটির পুলিশের খাতায় জামায়াতে ইসলামীর পলাতক শীর্ষ নেতারা সম্প্রতি নিজেদের শক্তির মহড়া দিচ্ছেন। সাতকানিয়ায় চষে বেড়াচ্ছেন ‘পলাতক’ সাবেক এমপি জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী ও অন্য নেতা কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির শামসুল ইসলাম। তারা দুজনই গেল ১ মে ও ২৫ এপ্রিল যথাক্রমে নিকটবর্তী পারকি ও ভোয়ালিয়া পাড়ায় পিকনিকের নামে কর্মী জমায়েত করেন। জামায়াতের এ দুই নেতার মাঝেও আছে একই সংসদীয় আসনের প্রতিযোগিতা।

জামায়াতের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা ও সাংগঠনিক অবস্থাকে আরও মজবুত করতেই পাশের কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ইফতারি ও জাকাতের সামগ্রী দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সুকৌশলে সমর্থক বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতিসচেতনরা। একই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশের জাতীয় অর্জনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। স্থানীয় জামায়াত নেতারা অবশ্য এমন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে ইফতারি ও জাকাতসামগ্রী বিতরণে এত মানুষের প্রাণহানির এই ঘটনার আড়ালে যা-ই থাকুক, সঠিক তদন্তে তা বের করে আনা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি ড. এম এম মনিরুজ্জামান।

সর্বশেষ খবর