শনিবার, ১৯ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

জুনের আগে মিলবে না সুস্বাদু আম

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

জুনের আগে মিলবে না সুস্বাদু আম

আগামীকাল শুরু হচ্ছে গাছ থেকে গুটি জাতের আম পাড়া। আর সুস্বাদু হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত ও লক্ষণভোগ নামানো যাবে না ১ জুনের আগে। তাই রোজার মাঝামাঝি মিলবে রাজশাহীর সুস্বাদু আম। আর এখন বাজারে যে আম পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো ভারতীয়। তবে এক ধরনের ব্যবসায়ী এগুলোকে দেশি আম বলে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। এবার আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা মিলে আম পাড়ার এই দিন নির্ধারণ করেছেন। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় আম চাষি-ব্যবসায়ীরা এ সিদ্ধান্ত নেন। জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের সভায় সভাপতিত্ব করেন। এর আগে বিভিন্ন জাতের আম নামানোর জন্য সম্ভাব্য সর্বপ্রথম দিন ঠিক করে মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসনে একটি চিঠি আসে। তবে, মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সময় নয়, স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়েই দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে জেলা প্রশাসন তাদের নিয়ে এই সভার আয়োজন করে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গাছে পাকলেই গুটি আম পাড়তে পারবেন চাষিরা। তবে ২০ মে’র আগে গাছ থেকে নামানো যাবে না গোপালভোগ জাতের আম। হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত ও লক্ষণভোগ নামানো যাবে না ১ জুনের আগে। আর ল্যাংড়া নামানো যাবে জুনের ৬ তারিখ থেকে। এ ছাড়া আমরুপালি ও ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা জাতের আম ১ জুলাইয়ের আগে চাষিরা গাছ থেকে পাড়তে পারবেন না। কৃষি মন্ত্রণালয় অবশ্য গোপালভোগ পারার সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করেছিল মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। তবে সভায় আম চাষিরা বললেন, এবার আবহাওয়া বেশ ঠাণ্ডা। তাই গোপালভোগ পাড়ার জন্য কয়েকটা দিন পিছানো যায়। এ ছাড়া হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত ও লক্ষণভোগের জন্য জুনের প্রথম সপ্তাহ এবং ফজলির জন্য জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ ঠিক করেছিল মন্ত্রণালয়। তবে চাষি ও ব্যবসায়ীরা তাদের সুবিধামতো দিন ঠিক করলেন। অবশ্য তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেন ফল গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি বিভাগ ও আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তারা। সভায় জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের বলেন, রাজশাহীর আমে কখনো ফরমালিন মেশানো হয় না।

হয় না কৃত্রিমভাবে আম পাকানো। কিন্তু  যখন বাজারে অনেক আগে-কিংবা পরে আম পাওয়া যায়, তখন অনেকেই মনে করেন যে, আমে কেমিক্যাল দেওয়া আছে। ক্রেতাদের এই ভীতি দূর করতেই আম পারার একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে নেওয়া হলো। এতে কেউ মনে করবেন না যে, এই আম এখন গাছে থাকার কথা নয়। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সবার আগে চাষিদের স্বার্থ রক্ষা করা হলো।

তিনি জানান, বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী আম নামানো হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হবে। এ জন্য প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট    সময়ের আগে আম পারা হলে এই কমিটি ব্যবস্থা নেবে। আর চাষি ও ব্যবসায়ীদের সব সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কাজ করবে। এ জন্য জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে অস্থায়ী অফিস খুলবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বানেশ্বরে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের শাখাগুলো শনিবারও খোলা থাকবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিনে আট ঘণ্টা করে দিনরাত সেখানে দায়িত্ব পালন করবেন। আর আম পরিবহনে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে পুলিশ।

সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত পাল, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক খান, রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জিএম মোরশেদুল বারী, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি, বিএসটিআই’র রাজশাহীর উপ-পরিচালক খাইরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া চাষিদের মধ্য থেকে বাঘার জিল্লুর রহমান ও ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে রাজশাহীর আজমল হোসেনসহ আরও অনেকেই বক্তব্য রাখেন।

কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। প্রতি হেক্টর জমির আমবাগান থেকে ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। সে অনুযায়ী, প্রতি মৌসুমে রাজশাহীতে সাধারণত এক লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। কিন্তু এবার কালবৈশাখী কম হওয়ায় আমের উৎপাদন এর চেয়েও বেশি আশা করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন বলেও আশা কৃষি বিভাগের।

বাঘার আম চাষি রোস্তম আলী জানান, এখনই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের ভারতীয় আম। সেই আম দেশের বাজারে রাজশাহীর বলে চালানো হচ্ছে। এটি এক ধরনের প্রতারণা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক জানান, চাষি ও ব্যবসায়ীরা মিলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা কার্যকর করতে প্রশাসন তৎপর। ফলে এখন বাজারে গোপালভোগ ও ক্ষিরসাপাত বলে যে আম বিক্রি হচ্ছে তা ভারত থেকে আমদানি করা।

সর্বশেষ খবর