শিরোনাম
বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইফতার

রংপুরে এবারও শীর্ষে হালিম-দইবড়া

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

রংপুরে এবারও শীর্ষে হালিম-দইবড়া

রোজা আসে, রোজা চলে যায়। প্রতি বছর রংপুরে ইফতারির তালিকায় যুক্ত হয় নতুন নতুন খাবার। এ বছর ইফতারির তালিকায় নতুন বাহারি খাবার যুক্ত হলেও ঐতিহ্যবাহী হালিম ও দইবড়ার স্থান কেউ দখল করতে পারছে না। রমজানের শুরু থেকেই ইফতারির শীর্ষে রয়েছে হালিম ও দইবড়ার কদর। তবে এবার দাম কিছুটা বাড়লেও ইফতারে শতভাগ পূর্ণতা আনতে দইবড়া ও হালিম কিনতে কার্পণ্য করছেন না রোজাদাররা। নগরীর বেশ কয়েকটি ইফতারের দোকান ঘুরে ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ইফতারিতে বুট, বুন্দিয়া, বেগুনি আর পিয়াজুর আমেজ অনেকটাই কমে গেছে। এবার তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন বাহারি খাবার। এর মধ্যে মাংসের রেজালা, মাসকেট হালুয়া, জালি কাবাব, রাসমতী, টিকা কাবাব, কলিজার চাপ, রাজভোগ, ফালুদা, ডিমের চাপ, চিকেন ফ্রাই, পাটিসাপটা পিঠা। রোজার মাসে প্রথম হালিম ও দইবড়া তৈরি শুরু করে মেডিকেল মোড়ের বৈশাখী হোটেল ও রেস্তোরাঁঁ। এক যুগ ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি হালিম ও দইবড়া বিক্রি করছে। তাদের দেখাদেখি কাচারিবাজার এলাকার মহুয়া কনফেকশনারি ও মৌবন কনফেকশনারিও হালিম তৈরি শুরু করে। তবে দইবড়া কেবল বৈশাখীই তৈরি করে। গতকাল সরেজমিন দেখা যায় ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। দুপুরের পর থেকেই দইবড়া ও হালিম বিক্রিতে ক্রেতার ভিড় জমে যায়। বৈশাখীর হালিম ও দইবড়া বিক্রির দায়িত্বে আছেন কর্মচারী শাহিন আলম। তিনি বলেন, টকদইর মধ্যে মাষকলাইর ডালের বড়া দেওয়া হয়। এভাবে তৈরি হয় দইবড়া। তবে এবার হালিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। গতকাল বিকালে মেডিকেল মোড়ে বৈশাখী হোটেলে হালিম ও দইবড়া কিনতে আসেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি জানালেন, এ বছর ইফতারির আয়োজনে ভাজাপোড়া খাবার নেই। ফল-ফলারির সঙ্গে শরবত আছে। তবে বৈশাখীর দইবড়া ও হালিম ছাড়া ইফতারটা জমে না। এজন্য প্রতিদিনই এক বাটি হালিম ও এক বাটি দইবড়া কিনতে আসি। বৈশাখী হোটেলের স্বত্বাধিকারী ফজলুল হক বলেন, চাহিদা অনুযায়ী দইবড়া ক্রেতাদের সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এটি তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। রংপুরের ঐতিহ্যবাহী জিলাপি তৈরি করে নগরীর নবাবগঞ্জ বাজারের মুসলিম মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। কি শহর কি গ্রাম সব মানুষের প্রিয় এই জিলাপি। মুসলিম মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সারা বছর এই জিলাপি মিললেও রমজানের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। দূরদূরান্ত থেকে এই জিলাপি কিনে নিয়ে যায় লোকজন। নগরীর বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী শেখ শাহীন বলেন, স্বাদ মুখে লেগে থাকে বলে রমজানে প্রতিদিন ছুটে যাই মুসলিমের জিলাপি কিনতে। নগরীর কাচারিবাজারে মহুয়া কনফেকশনারি ও মৌবন কনফেকশনারি বুট, বুন্দিয়া, বেগুনি ও পিয়াজুর পাশাপাশি নতুন করে বিক্রি করছে মাংসের রেজালা, মাসকেট হালুয়া, জালি কাবাব, রাসমতী, টিকা কাবাব, কলিজার চাপ। মৌবন নতুন খাবার হিসেবে পাটিসাপটা পিঠা ও বাখরখানি বিক্রি করছে। মহুয়া কনফেকশনারির স্বত্বাধিকারী মুন্না মিয়া বলেন, ইফতারিতে আলাদা স্বাদ আনার জন্য এ বছর নতুন নতুন খাবার তৈরি করা হচ্ছে।

এ ছাড়া নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়ে স্বাদ কনফেকশনারি, নিউ স্বাদ কনফেকশনারি, মিঠু হোটেল, পুষ্টি, সেন্ট্রাল রোডের খালেক হোটেল, দেশ রেস্টুরেন্ট, মেডিকেল মোড়ের চাঁদনি, স্টার, সাতমাথার বিসমিল্লাহ হোটেল ও রেস্তোরাঁ, ভাই ভাই হোটেল, মাহিগঞ্জে নিরঞ্জন অ্যান্ড সন্স, লালবাগের নূরানী হোটেল ও রেস্তোরাঁ এ বছর ইফতারিতে নতুন খাদ্যসামগ্রী সংযোজন করেছে। এ ছাড়া এবার রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির যৌথ উদ্যোগে নগরীতে ২০টি স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারিসামগ্রী বিক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পুরো রমজান জুড়ে এসব কেন্দ্রে ইফতারি বিক্রি করা হবে বলে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু জানিয়েছেন। জেলা নিরাপদ খাদ্য ও জনস্বাস্থ্য পরিদর্শক মাহবুবার রহমান জানান, রমজানের প্রথম দিনই ভেজালবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। কিছু কিছু দোকানে বাসি খাবার মিললেও তা গত বছরের তুলনায় অনেক কম।

সর্বশেষ খবর