বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি দেখেশুনে

ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তি

আকতারুজ্জামান

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শেষ। কয়েক মাস পরেই শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে নানান চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের    প্রলুব্ধ করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, সরকার অননুমোদিত কোনো প্রোগ্রাম বা কোর্সে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হলে এর দায় ইউজিসি  নেবে না। এ ছাড়া কোনো আউটার বা অবৈধ ক্যাম্পাসে      কোনো ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হলে সে দায় নিতে হবে সংশ্লিষ্ট ছাত্র-ছাত্রীকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে দেখেশুনে    খোঁজ নিয়ে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি। এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। গণবিজ্ঞপ্তির তথ্য মতে, আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে  ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ২০০৬ সালের অক্টোবরে আমেরিকা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। পরে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পরিদর্শনে গিয়ে দেখে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম পরিচালনার ন্যূনতম কোনো সুযোগ-সুবিধা বা যোগ্যতা নাই। পরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধ করতে সরকারকে অনুরোধ করেছে ইউজিসি। ২০০৬ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের রিট দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অনুমতি প্রদান করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সরেজমিন দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়কে পত্র দেয় ইউজিসি। এ পত্রের কার্যকারিতা স্থগিত করতে আরেকটি রিট দায়ের করলে আদালত ইউজিসির পত্রের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে ইউজিসি আপিল দায়ের করেছে। এ ছাড়া আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ঠিকানা ৭৩৯ মেহেদীবাগ ও ২২ শহীদ মির্জা লেন চট্টগ্রাম। এ ছাড়া বাকি সব আউটার ক্যাম্পাস অবৈধ। গত অক্টোবরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ নির্দেশনার বিরুদ্ধে রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে আদালতে দুটি মামলা চলমান আছে। জানা গেছে, চারটি বিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিত ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং-এর রাজধানীতে সেন্ট্রাল রোড ধানমন্ডির ক্যাম্পাস, দি পিপলস ইউনিভার্সিটির আবদুল্লাহপুর, উত্তরার ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার বাড়ি ৭২, রোড ১৭, ব্লক সি, বনানীর ক্যাম্পাস এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহমাখদুম রোড ক্যাম্পাস, সোনারগাঁও রোড উত্তরার ক্যাম্পাস অননুমোদিত বলে জানানো হয়েছে ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রামের সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি (বিবিএ, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, এমবিবিএস, বিডিএস, ফিজিওথেরাপি) প্রোগ্রাম আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় চালুর অনুমতি দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ে সেটি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারেনি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি বন্ধ রয়েছে। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করেছে সরকার। সম্প্রতি অনুমোদন পাওয়া রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, রূপায়ণ এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ার খান মডার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, জেড এন আর এফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি।

সূত্রমতে, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০১টি। এসবের মধ্যে পাঠদান কার্যক্রম চালু আছে ৯১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু এগুলোর মধ্যে ৩১টিতে উপাচার্য, ৭১ টিতে উপ-উপাচার্য ও ৪৭টিতে কোষাধ্যক্ষ নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করবেন রাষ্ট্রপতির নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য। উপাচার্য ব্যতীত অন্য কেউ স্বাক্ষর করলে সার্টিফিকেট বৈধ হবে না। দেশে কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা, ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের আইন মেনে চললেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আইনের তোয়াক্কা করে না। তাই এসব বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ভর্তিচ্ছুদের অবহিত করা হয়েছে। যাতে কেউ অননুমোদিত ক্যাম্পাস বা প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে প্রতারিত না হন।

সর্বশেষ খবর