রাজধানীর কর্মব্যস্ত মানুষগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে শহরের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে। অনেকেরই ইফতারের আগে বাড়ি ফেরা হয়ে ওঠে না। বাধ্য হয়েই তারা ইফতারি করছেন রাস্তায় কিংবা ফুটপাথে। আপনার হয়তো জানা নেই, এই খাবারগুলোর সঙ্গে হয়তোবা পূর্ব থেকেই মিশানো থাকতে পারে নেশা জাতীয় দ্রব্য। আর এমনটা করছে রাজধানীর ব্যস্ততম স্থানগুলোকে টার্গেট করে গড়ে ওঠা অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা। আপনিও হতে পারেন তাদের এমন টার্গেটের শিকার। তারা ইফতারের বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে আলাদা করে রাখে। তারপর টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে উক্ত খাবার খাইয়ে অজ্ঞান করে লুটে নেয় সর্বস্ব। কখনো বা তারা ইফতারির সময় ফেরিওয়ালা সেজে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশ্রিত খাবার নিয়ে উঠে পড়ে বিভিন্ন যাত্রীবাহী যানবাহনে। সে খাবারগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তারা বিক্রি করে। বিশ্বাস স্থাপনের জন্য সাধারণ যাত্রীদের পাশে বসে থাকা তাদের দলের অন্য সদস্যরা আগে খাবার কিনে। তারপর পাশে থাকা যাত্রীদেরকেও খাবার কিনতে আগ্রহী করে তোলে। এরপর ইফতার খেয়ে সাধারণ যাত্রীরা অজ্ঞান হয়ে পড়লে সুযোগ বুঝে সবকিছু লুটে নেয় তারা। গত ২৪ ঘণ্টায় অজ্ঞান ও ছিনতাই পার্টির ৬১ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) দেবদাস ভট্টাচার্য। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, শনিবার গোয়েন্দা পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ বিভাগের কয়েকটি টিম শ্যামলী, জুরাইন, কমলাপুর ও নিউমার্কেট থেকে ৩২জন অজ্ঞান পার্টির এবং সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের কয়েকটি টিম গুলিস্তান, নিউমার্কেট, শাহবাগ থেকে ২৯জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯২টি লেক্সোটেনিল ও ৪০টি লুজিকাম চেতনানাশক ট্যাবলেট এবং ২টি ঝান্ডুবামসহ একাধিক মলমের কৌটা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা জানায়, সরল ও নিরীহ যাত্রীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে কৌশলে আলাপচারিতার মাধ্যমে ইফতারির খাদ্যদ্রব্যসহ চা, ডাব, পানি ও জুস ইত্যাদি বিভিন্ন খাবার খাওয়ার অনুরোধ করে। রাজি হলে যাত্রীদের ট্যাবলেট মিশ্রিত চা, ডাব, পানি ও জুস ইত্যাদি খাওয়ায়। খাবার খেয়ে যাত্রীরা অজ্ঞান হলে তাদের সঙ্গে থাকা টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে, গ্রেফতারকৃত ছিনতাইকারীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীদের এবং মার্কেটে আসা ক্রেতাদের কৌশলে ও সরলতার সুযোগে নাক, মুখ ও চোখে চেতনানাশক মলম লাগিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল, ব্যাগ ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়।
