রবিবার, ৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

নওগাঁয় পাঁচ বছরে আম চাষ বেড়েছে দ্বিগুণ

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

লাভ বেশি হওয়ায় নওগাঁর অনেক কৃষক ধান ছেড়ে আমের চাষে ঝুঁকছেন। প্রতি বছর প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে গড়ে উঠছে আমবাগান। স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে জেলায় আম চাষ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ বছর জেলায় আমের ফলন হয়েছে ভালো। ইতিমধ্যে সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর এলাকায় আগাম জাতের আম উঠতে শুরু করেছে। আমের মোকাম হিসেবে পরিচিত পোরশার সারাইগাছী, নিয়ামতপুরের আড্ডা ও সাপাহার বাজারে বেচাকেনা শুরু। মৌসুমের শুরুতে আমের দাম ভালো থাকায় আমচাষিরা খুশি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর, মান্দা, ধামইরহাট উপজেলা ছাড়াও জেলার ১১টি উপজেলায় আমবাগান গড়ে উঠেছে ১৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চলতি বছর প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন হিসেবে এ বছর আম উৎপাদন হওয়ার কথা ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ জেলায় আমের আবাদ হয় ৭ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। ফলন হয় ৯৯ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ করে ফলন হয় ১ লাখ ২২ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ করে ফলন হয় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলায় ১৩ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করে ফলন হয় ১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। নওগাঁর পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আমের আবাদ হয়ে থাকে। জেলায় সবচেয়ে বেশি আমের আবাদ হয় পোরশা উপজেলায়। এই উপজেলাতে জেলার মোট উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি আম উৎপাদন হয়।

পোরশা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম বলেন, এ বছর পোরশায় আমের আবাদ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এখানকার বেশিরভাগ আমচাষিই অভিজ্ঞ। ফলে এখানে আমের ফলনও হয় বেশি। সঠিক ব্র্যান্ডিংয়ের (প্রচার-প্রচারণা) অভাবে এই আমগুলোই ঢাকায় কিংবা দেশের অন্য অঞ্চলে গিয়ে চাঁপাই কিংবা রাজশাহীর আম বলে পরিচিত হচ্ছে। কৃষি বিভাগ ভূগর্ভস্থ পানি কম ব্যবহার হয় এমন ফসল কিংবা আম চাষে কৃষকদের বেশি আগ্রহী করে তুলছে।

পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়া গ্রামের আমচাষি আমির উদ্দিন বলেন, ‘হামাগের এলাকা ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকা। ডিপ টিউবওয়েল হয় না। খরার সময় স্যাচের (সেচ) অভাবে ইরি ধান আবাদ হয় না। আমন ধান আবাদ হলেও অ্যাঁটেল (এঁটেল) মাটি হওয়ায় ধানের ফলন ভালো হয় না। এক বিঘা জমিত বছরে ২০ মণ ধান উৎপাদন হলে যে লাভ হবে ওই জমিতে আমবাগান করলে তার ডবল (দ্বিগুণ) লাভ হয়। তাই ম্যানষের দেখাদেখি হামিও হামার ১০ বিঘা জমিত আমবাগান গড়ে তুলছি। গত বছর ১০ বিঘা বাগানে সাড়ে ৪ লাখ টাকার আম বিক্রি হছিল’।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজশাহী বিভাগের চারটি জেলায় (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর) মোট আম উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু নওগাঁতেই আমের উৎপাদন ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল। নওগাঁয় উৎপাদিত প্রায় সব আম আধুনিক প্রজাতির। অথচ নওগাঁর আমের কোনো পরিচিতি নেই। ব্যবসায়ীরা নওগাঁ থেকে আম কিনে নিয়ে সেগুলোকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে চালিয়ে দিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর