সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ মে নিহত পরিবেশ আন্দোলনকর্মী উত্তর কুমার দেবনাথের মৃত্যুকে ‘হত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২৪ সংগঠন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, এই পদক্ষেপ সরকারকেই নিতে হবে। জাতীয় জাদুঘরের সামনে সকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার নেত্রী ও বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি সুলতানা কামাল।
বাপার যুগ্ম-সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন— প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, বাপার সহ-সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বাপার সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন, যুগ্ম-সম্পাদক ইকবাল হাবিব, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক এটিএম নুরুল আমিন, ড. মাহবুব হোসেন প্রমুখ। সভাপতির ভাষণে সুলতানা কামাল বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের দেশে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। দেশের মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। দেশে সংবেদনশীলতা ভোঁতা হয়ে গেছে। এ দেশের মানুষ যেখানেই যাচ্ছে, মরিয়া হয়ে ছুটে যাচ্ছে। অন্যকে মাড়িয়ে কেন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা? এর কারণ পুরো সমাজে অনাচার ঢুকে পড়েছে, যার খেসারত দিচ্ছি আমরা সবাই মিলে। সুলতানা কামাল আরও বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করি, যে দেশের সরকার সাধারণ জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে সে জনগণের সুযোগ-সুবিধার কথাই ভুলে যায়। স্বার্থান্বেষী মহল বাস মালিক ও শ্রমিকদের সার্থকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে রাস্তায় মানুষ হত্যার পক্ষে কথা বলে। পরিবহন সেক্টরে আমাদের সুশাসন আর জবাবদিহিতার অভাব, সামাজিক অনাচারকে আরও উসকে দিচ্ছে। এসব কিছুরই পেছনে রয়েছে নীতিহীনতা ও দুর্নীতি। এ অবস্থা আর চলতে পারে না, চলতে দেওয়া হবে না। আর যেন কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ না করে তার জন্য সরকারকেই প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ড্রাইভার ও মালিকদের বেশি লাভের প্রতিযোাগতায় পিষ্টহয়ে আর কোন পরিবারের উপার্জনের চাকা যেন বন্ধ হয়ে না যায়।
বাপার আরেক সহ-সভাপতি রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কান্না নীতিনির্ধারকদের কানে পৌঁছায় না। আমরা তাঁদের দেশ পরিচালনার অর্থ জোগান দিচ্ছি, তাঁরা আমাদের স্বাভাবিক মত্যুর নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এ দেশের মানুষকে সোচ্চার হতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, সড়কে অবৈধ্য গাড়ী পার্কিং এবং ফুটপাথের উপর দোকান বন্ধ করতে হবে। এই জন্য সরকারসহ সকলে মিলে কাজ করতে হবে।প্রসঙ্গত, গত ২১ মে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে বাসের ধাক্কার পর ট্রাকচাপায় নিহত হন পরিবেশ আন্দোলনকর্মী উত্তমকুমার দেবনাথ।
সমাবেশে ১৬টি দাবি জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে- ১. উত্তম দেবনাথ হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচার ও উত্তমের পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান। ২. মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর যুগোপযোগী সংশোধনী আনা ও তা বাস্তবায়ন। ৩. পথচারী ও অযান্ত্রিক যানে নিরাপদে চলাচলের উপযোগী পরিবেশ তৈরি। ৪. উল্টোপথে গাড়ি চালানো বন্ধ করা। ৫. যথাযথভাবে বিদ্যমান সড়কপথ পরিচালনা ও মেরামত করা। ৬. ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের নিষিদ্ধ ও শাসিত্ম প্রদানের ব্যবস্থা করা। ৭. পরিবহন মালিকদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং অপরাধের ভিত্তিতে শাস্তির বিধান চালু করা। ৮ যুক্ত গাড়ি বাতিল করা। ৯. ট্রিপের পরিবর্তে চালকদের মাসিক বেতনে নিয়োগের ব্যবস্থা। ১০. সড়ক ব্যবহারকারী সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ১১. যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা। ১২. বি আরটিএকে স্বচ্ছ ও কার্যকর করা। ১৩. রেল ও নৌব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ করা এবং সড়কনির্ভরতা কমানো। ১৪. প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক তৈরিতে প্রতিটি জেলায় প্রশিক্ষণ একাডেমি চালু। ১৫. যাত্রী, যানবাহনের মালিক, চালক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সবার সহযোগিতায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ১৬. পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে মালিকপক্ষ থেকে নিয়োগপত্র প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ।
সমাবেশে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ডক্টরস ফর হেলথ এ্যসিন্ড এনভায়রণমেন্ট, গ্রীণভয়েস, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ-স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, বক িপস্ন্যানেট ইনিশিয়াটিভ, নাগরিক উদ্যোগ, ফ্যামিলিজ ইউনাইটেড এগেইনস্ট রোড একসিডেন্টস (ফোয়ারা), সুন্দর জীবন, নিরাপদ ডেভলেপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন, পুরাণ ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরাম, পুরাণ ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ,আদি ঢাকাবাসী ফোরাম, বিসিএইচআরডি, নাগরিক অধিকার সংরড়্গণ ফোরাম, ওয়ার্ক ফর গ্রীণ বাংলাদেশ, এইচডিডিএফ, সিডিপি, ষোলোআনা ফাউন্ডেশন, প্রভাতী উন্নয়ন সংস্থা, যাত্রী কল্যাণ সমিতি, তরু পল্লব এবং বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন।