সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে শঙ্কা

সংসদে ব্যাপক আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ঈদে সড়ক পথে যাত্রীদের বাড়ি ফেরার ভোগান্তি নিয়ে সংসদে নিজেদের আশঙ্কার কথা তুলে ধরলেন বিরোধী দলের এমপিরা। জাতীয় পার্টির এমপি নুরুল ইসলাম ওমর বলেছেন, আমাদের উত্তরবঙ্গের মানুষ আতঙ্কে আছেন, এবার ঈদে কীভাবে তারা বাড়ি ফিরবেন? এখনই চন্দ্রা থেকে গাবতলী আসতে ৬-৭ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির অপর সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেছেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে, বিভিন্ন মহাসড়কের অর্ধেকের বেশি রাস্তায়ই নষ্ট। সড়কের এই বেহাল দশায় ঈদের সময় মানুষ চলাচল করবেন কীভাবে?

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে গতকাল ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সড়কের বেহাল দশায় যাত্রীদের ঈদে বাড়ি ফেরার ভোগান্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। পীর ফজলুর রহমান আরও বলেন, এর আগেও সংসদে সড়কের বেহাল দশা নিয়ে কথা বলেছিলাম। তখন সেতুমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রসববেদনা তো থাকবেই। আর কতদিন প্রসববেদনা থাকবে। এই প্রসববেদনা বেশিদিন থাকলে প্রসূতিই মারা যাবে।

বিআরটিসির লোকসান ৪৭৩ কোটি টাকা : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় স্কেল বাস্তবায়নের আগে বিআরটিসি অপারেটিং লাভে ছিল। কিন্তু পরবর্তী নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের ফলে চলতি অর্থবছরে ৪৭৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

সংসদের বাজেট অধিবেশনে গতকাল সেলিম উদ্দিনের (সিলেট-৫) তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘পে-স্কেল-২০১৫ বাস্তবায়নের ফলে বিআরটিসির বেতন-ভাতা পূর্বের তুলনায় প্রতি মাসে ২.৮ কোটি টাকা বেড়েছে।’ তিনি জানান, বিআরটিসিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি, পেনশন-গ্র্যাচুইটি যাবতীয় খরচ করপোরেশন নিজস্ব আয় থেকে বহন করে থাকে। এ সময় মন্ত্রী লোকসানের কারণসমূহ তুলে ধরেন। মন্ত্রী বলেন, পে- স্কেল বাস্তবায়নের ফলে সরকার থেকে বিআরটিসি বকেয়া বেতন-ভাতা এবং গ্র্যাচুইটি খাতে ২১ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ পেয়েছে। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট-এর আওতায় বিআরটিসির জন্য ৪০০টি বাস, ৫০০টি ট্রাক কেনার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। চালকসহ বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন এবং ডিপোগুলোতে সচ্ছলতা আনার জন্য ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে।

বিমানবন্দর থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত পাতাল রেল : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে ও বৃহত্তর ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু, পরিকল্পিত, সমন্বিত ও আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এই মেগা প্রকল্প পাঁচটি রুটের মাধ্যমে নগরবাসীর সেবা দেবে। এ ছাড়া বিমানবন্দর থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত প্রথম পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে।

গতকাল প্রশ্নোত্তর পর্বে মহিলা এমপি বেগম পিনু খানের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, এমআরটি লাইন-১ নির্মাণের লক্ষ্যে বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের জন্য ২০১৭ সালের ২৯ জুন জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে প্রথম পাতাল রেল নির্মিত হতে যাচ্ছে। যার রুট হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-খিলক্ষেত-কুড়িল-যমুনা ফিউচার পার্ক-বাড্ডা-রামপুরা-মালিবাগ-রাজারবাগ-কমলাপুর এবং কুড়িল থেকে কাঞ্চন সেতুর পশ্চিম পার্শ্ব পর্যন্ত। এর মোট দৈর্ঘ্য হবে ২৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার। মন্ত্রীর তথ্যানুযায়ী, মেট্রোরেল প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬-এর কাজ আটটি প্যাকেজের আওতায় চলছে। আরও দুটি এমআরটি লাইন-১ এবং এমআরটি লাইন-৫ নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্য সমীক্ষার কাজ চলছে। এই প্রকল্পে উত্তরা ৩য় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আংশিক চালু হবে ২০১৯ সালে এবং উত্তরা ৩য় পর্ব থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত চালু হবে ২০২০ সালে। তিনি জানান, এমআরটি লাইন-১-এর জন্য স্টেশন থাকবে ১৭টি। বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, কুড়িল, নর্দা (যুমনা ফিউচার পার্ক), নতুনবাজার, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ, কমলাপুর, কুড়িল, বসুন্ধরা, মাস্তল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার ও পূর্বাচল টার্মিনালে স্টেশন থাকবে। এমআরটি লাইন-৫ নির্মাণের জন্যও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এর (উত্তরাংশ) দৈর্ঘ্য হবে ১৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার (এলিভেটেড ৬ কিলোমিটার ও আন্ডারগ্রাউন্ড ১৩ দশমিক ৬০ কিলোমিটার)। রুট হবে হেমায়েতপুর-গাবতলী-টেকনিক্যাল-মিরপুর-১-মিরপুর-১০-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান-ভাটারা এবং গাবতলী-ধানমন্ডি-বসুন্ধরা সিটি-হাতিরঝিল-লিংকরোড পর্যন্ত। এ ছাড়া এমআরটি লাইন-৫ (দক্ষিণাংশ) রুট হবে-গাবতলী-ধানমন্ডি-পান্থপথ-হাতিরঝিল-লিংক রোড-নগরপাড়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর