গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই কৌশলী হচ্ছেন প্রার্থীরা। পবিত্র রমজান মাসেও প্রার্থীরা ভোটারদের পক্ষে টানতে একের পর এক কৌশলী প্রচারণা চালাচ্ছেন। যদিও ১৮ জুনের আগে নির্বাচনী যে কোনো প্রচারণা নিষেধ করে রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তার পরও যার যার মতো প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীরা যেমন তেমন, তার চেয়ে বেশি কৌশলী মেয়র প্রার্থীরা। কেউ ইফতারের দাওয়াতে অংশ নিচ্ছেন, আবার কেউ কর্মীদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। কেউ নিজের ও নেতা-কর্মীদের আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করছেন। ঈদের পর ২৬ জুন গাজীপুর সিটিতে ভোট। তবে বড় দুই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে এ কৌশলী ভাব বেশি দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগও জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে বৃষ্টির কারণে গাজীপুর মহানগরজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে নগরবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। সামান্য বৃষ্টি হলেই টঙ্গী, গাছা, বোর্ডবাজার, গাজীপুর চৌরাস্তা, জয়দেবপুর, কোনাবাড়ী, কলেজ গেটসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অতীতের মেয়রের অপরিকল্পিত ড্রেনেজব্যবস্থা এবং জলাধার সংরক্ষণে ব্যর্থতাই এর জন্য দায়ী। তিনি নির্বাচিত হলে পরিকল্পিত ড্রেনেজব্যবস্থার পাশাপাশি জলাধার সংরক্ষণে উদ্যোগী হবেন। তিনি সবাইকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, নগরবাসীর প্রতিটি দুর্ভোগই মেয়র মান্নানের ওপর নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ শুধু মেয়র মান্নানকেই নির্যাতন করেনি বরং গোটা নগরবাসীকে নির্যাতন করেছে। আজকে সামান্য বৃষ্টি এলেই এই নগর তলিয়ে যায়। মেয়র মান্নান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সর্বপ্রথম জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাকে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুযোগ দিলে আজকে জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর এ দুর্ভোগ থাকত না। নগরের ৩৬ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইফতারপূর্ব আলোচনায় ভোটারদের কাছে দোয়া ও সমর্থন চেয়েছেন নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। সকাল থেকে ছয়দানার নিজ বাড়িতে নগরের ৪২৫টি কেন্দ্র কমিটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি। জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম নগরের কামারজুরি উচ্চবিদ্যালয় ও গাছা বাজার দলীয় কার্যালয়ে আলাদা দুটি ইফতার মাহফিলে অংশ নেন। এসব ইফতারে শত শত সাধারণকে মানুষ অংশ নিতে দেখা গেছে। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান। মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মহির সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে ডা. মোজাফ্ফর হোসেন, মো. শহীদ উল্লাহ, আকরাম হোসেন সরকার, মো. মনিরুজ্জামান মনির বক্তব্য দেন। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি কর্মে বিশ্বাসী। সিটি করপোরেশনকে একটি জনবান্ধব ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য।’ অন্যদিকে মঙ্গলবার ধানের শীষের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গীর নিজ বাড়িতে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী আলোচনা করেন। দুপুরে নির্বাচনী এলাকার বাইরে বাঘেরবাজার এলাকায় নিজের সাবাহ গার্ডেনের প্রতিবেশী দরিদ্রদের মধ্যে জাকাতের কাপড় বিলি করেন। বিকালে বাসায় ফিরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নেন। হাসান সরকার বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় নির্মমভাবে কারা নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। অথচ চিকিৎসা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে একজন সাধারণ নাগরিকের মতোও আচরণ করছে না এই সরকার। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য আজকে দাবি উত্থাপন করতে হয়; এর চেয়ে লজ্জার কী হতে পারে। অথচ দেশে মহোৎসবে দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে। কোনো বিচার হচ্ছে না। সাধারণ মানুষও কোনো ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। দেশে বিচারের নামে চলছে প্রহসন। মানুষের ভোটাধিকারও হরণ করা হচ্ছে। গুম, খুন, জুলুম, নির্যাতন, দুঃশাসনে অতিষ্ঠ মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলছে। এ অবস্থায় মানুষ ব্যালট প্রয়োগের সুযোগ পেলে সমুচিত জবাব দেবে।