মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদা জিয়া সিএমএইচে চিকিৎসা নেবেন না

————— ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা নেবেন না বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া। এ কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একবার বলা হচ্ছে বিএসএমএমইউতে পাঠানো হবে, সেখানে ভালো ভালো ডাক্তার আছেন। আবার বলছেন সিএমএইচে পাঠানো হবে। আসলে সরকারের মনোভাব খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দেওয়া। কালবিলম্ব না করে যে হাসপাতালে তিনি ভর্তি হতে চাইছেন, সেখানে ভর্তি করে দ্রুততম সময়ে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। রবিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়; ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন; যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ইউনাইটেড হাসপাতালের কথা কেন বলছি, তার কারণ হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার যে রোগগুলো আছে, সেগুলো শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় নয়, তাঁর সুচিকিৎসার প্রয়োজন আছে। খালেদা জিয়া যেসব অসুস্থতায় আক্রান্ত, এর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ দরকার। পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা আগের থেকে অবনতি ঘটেছে। যতটুকু খবর পেয়েছি, উনি এখন সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারছেন না। ব্যক্তিগত কাজকর্ম করার জন্য তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন হচ্ছে। যে চোখে অপারেশন সর্বশেষ হয়েছে, তা আরও লাল হচ্ছে। ঘাড়ের ব্যথা এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে বাঁ হাতের আঙুলগুলো সর্বক্ষণ ব্যথা করছে। এ কারণে হাত দিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। কোমরের ব্যথা বাঁ পায়ের তলা পর্যন্ত ছড়িয়েছে। এটা খুবই মারাত্মক।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিস্থাপন করা দুই হাঁটু দিয়ে চলাফেরা করছেন তিনি। এটাকে নরমাল এক্স-রে মেশিনে, নরমাল সিটি স্ক্যানে ও নরমাল এমআরআইতে হবে না। এজন্য স্পেশাল এমআরআই, স্পেশাল সিটি স্ক্যান ও স্পেশাল হসপিটালাইজেশন প্রয়োজন হবে। এ জিনিসগুলো দিতে সরকার কোনোভাবেই রাজি হচ্ছে না। অথচ আর একমুহূর্ত বিলম্ব না করে আজকেই (গতকাল) তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া দরকার।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অনেকে বলছেন আমরা ইউনাইটেড হাসপাতালের কথা বলছি কেন। বলছি এজন্য, আমাদের আস্থাটা ওখানে। রোগী যে ডাক্তারের ওপর আস্থা থাকে, সেই ডাক্তারের কাছে যায়। আমরা মনে করি, ইউনাইটেডে গেলে তাঁর উত্তম চিকিৎসা হবে।’ মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে যেভাবে নিঃসঙ্গ রাখা হয়েছে, এটা মানবাধিকারের বিপক্ষে, জেল-কোডের বিপক্ষে। একজন বন্দীকে নির্জনভাবে রাখতে পারেন না। এটা বেআইনি। জেল-কোডের কোথাও বলা নেই যে আমি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারব না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে যদি স্কয়ার হাসপাতালে নিতে পারেন, প্যারোলে বিদেশে পাঠাতে পারেন, নাসিম সাহেবকে যদি ল্যাবএইডে নিতে পারেন, জলিল সাহেবকে ল্যাবএইডে চিকিৎসা দিতে পারেন, তাহলে খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেডে দেবেন না কেন? কারণ কী? কারণ একটাই— আপনারা তাঁর ক্ষতি করতে চান। তাঁর জীবন বিপন্ন করতে চান। সে কারণেই আপনারা এই পথ বেছে নিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সরকারের কাস্টডিতে আছেন। বিনা চিকিৎসায় তাঁর কিছু হলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে। তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে কোনো মুহূর্তে প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারেন। গত শনিবার কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর স্বজনরা দেখা করেছেন। তাঁর শরীরের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক নাজুক। তিনি একা হাঁটতে পারছেন না। আমরা আজকের মধ্যে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

‘কয়েক দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’ এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, বেগম খালেদা জিয়া সিএমএইচে যাবেন না।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া জনগণের সম্পদ, জনগণের নেত্রী। তাঁর জীবনের মূল্য আমাদের কাছে অনেক বেশি। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করব। জনগণই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে। আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব এবং গণতন্ত্রকেও মুক্ত করব ইনশা আল্লাহ।’

ঈদের দিন কারাফটক থেকে ফিরে গেলেন বিএনপি নেতারা : শনিবার ঈদের দিন রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারের সামনে থেকে ফিরে গেলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সিনিয়র নেতারা। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে তারা সেখান থেকে ফিরে যান। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কারাগার গেটে আসেন তারা। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর তাদের জানানো হয়, অনুমতি দেওয়া হয়নি। তখন তারা বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন। মহাসচিবের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়সহ কয়েক শ নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হওয়ায় কারাফটকে সেদিন আগে থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

ঈদের দিন বেলা ১১টার দিকে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা রাজধানীর শেরেবাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তারা সেখানে ফাতিহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করেন। পরে বিকালে নেতৃবৃন্দ রাজধানীর বনানী কবরস্থানে জিয়া পরিবারের ছোট সন্তান মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর কবরে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাত করেন।

সর্বশেষ খবর