রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ট্রিপল নাইনে ৩৪ লাখ কল সেবা পেয়েছেন ২২ হাজার

জরুরি সেবার ছয় মাস

আলী আজম

ট্রিপল নাইনে ৩৪ লাখ কল সেবা পেয়েছেন ২২ হাজার

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর। জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশি সেবা পেতে সেবাটি চালু হলেও হালে এর অপব্যবহার হচ্ছে বেশি। এতে করে সাধারণ মানুষ যেমন হয়রানির শিকার হচ্ছে, যারা তথ্য দিতে বসে আছে তারাও নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় হওয়ার আগেই সেবার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, এ সেবাটি চালুর পর থেকে চলতি বছরের ১৬ জুন পর্যন্ত ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪২০টি কল এসেছে। এর মধ্যে মাত্র ২২ হাজার ৪১৮টি কল সরাসরি সমাধানযোগ্য (কল ফর সার্ভিস-সিএসএফ) ছিল। বাকি সব কলগুলো ছিল অপ্রয়োজনীয়। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, মোট কলের ১৮ শতাংশ কলের বিপরীতে কোনো না কোনোভাবে সার্ভিস দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর বিষয়ে প্রচারণার অভাব রয়েছে। এই কার্যক্রমের ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। শুধু পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কিংবা অ্যাম্বুলেন্সই নয় এর সঙ্গে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসাসহ মাঠপর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সামাজিক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ সেবাটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। তথ্যদাতা যেই হোক না কেন তাকে বেশি বিরক্ত করা যাবে না। তার কাছ থেকে একবারই তথ্য নিতে হবে। নইলে পরবর্তীতে তিনি তথ্য দিতে বিমুখ হবেন। অন্যরাও আগ্রহ হারাবে। তথ্য পাওয়া মাত্রই ভুক্তভোগীদের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সার্ভিস দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। তবেই এ সেবা চালু করার কাঙ্ক্ষিত সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। ৯৯৯ এ তথ্যদাতা একজন গ্রাহক জানান, সম্প্রতি সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে খিলক্ষেত এলাকায় একটি দুর্ঘটনা দেখতে পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দেন গ্রাহক। কল টেকার তার কাছ থেকে সব তথ্য নেন। পরে কল টেকার গ্রাহককে বলেন, আপনি লাইনে থাকুন। তিনি লাইনে থাকেন। এরপর দেওয়া হয় খিলক্ষেত থানার ডিউটি অফিসারকে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ডিউটি অফিসার ফোন ধরেন। পুনরায় তিনিও গ্রাহকের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জেনে নেন। পরে ঠিক আছে বলে লাইন কেটে দেন। এরপর ওইদিনই রাত দেড়টার দিকে গ্রাহকের কাছে ৯৯৯ থেকে ফোন আসে।

বলা হয়, খিলক্ষেতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। গ্রাহক তাকে বলেন, সকালের ঘটনা ফোন দিয়ে রেজাল্ট জানালেন এখন। রাত আড়াইটার দিকে আবারও গ্রাহককে ফোন করে ৯৯৯ এর সেবা নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়।

ওই গ্রাহক বলছেন, ২/৩ জায়গায় তথ্য দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এতে করে উৎসাহ হারাবে সাধারণ মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রয়োজনে অনেকে ফোন করছেন। দিচ্ছেন মিথ্যা তথ্যও। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর বিষয়ে প্রচারণার অভাব রয়েছে। এই কার্যক্রমের ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। কখন কল দিবে, কেন দিবে এ বিষয়ে এখনো সচেতনতা আসেনি। উন্নত বিশ্বে ৯৯৯-এ সব সেবাই মেলে। তাই না জেনে অনেকেই ফোন করেন। গেল ৬ মাসে ৯৯৯-এ ৮২ শতাংশ অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে।

পুলিশ সদর দফতরের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, কোনো অপরাধ ঘটতে দেখলে, প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দিলে, কোনো হতাহতের ঘটনা চোখে পড়লে, দুর্ঘটনায় পড়লে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে, জরুরিভাবে অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাওয়া যাবে। মোবাইল ও টেলিফোন উভয় মাধ্যমে সম্পূর্ণ টোল-ফ্রি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সেবা নেওয়া যাবে। এই সেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করছে।

৯৯৯ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ জানান, এই হটলাইন চালু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা চেয়ে ফোন আসছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কলের কারণে সমাধানযোগ্য সেবা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। সেবা গ্রহীতার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। চালু হওয়ার সময় ৩০টি লাইনে কল রিসিভ করা হতো। এ সংখ্যা বেড়ে এখন ১০০। কল টেকার ২৪ ঘণ্টা এসব কল রিসিভ করছেন। দ্রুত মিলছে সমস্যার সমাধানও। সম্প্রতি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। তা হলো— প্রতিটি গাড়িতে গাড়ির নম্বরের সঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ লাগানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে প্রথমে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে ৯৯৯ নম্বরে জাতীয় হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়। ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সেখানে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলে। গত ৮ অক্টোবর ৯৯৯ নম্বর পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২৬ অক্টোবর থেকে ৯৯৯-এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর