রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বরিশালে গণসংযোগের আড়ালে প্রচারণা, বিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে গণসংযোগের আড়ালে প্রচারণা, বিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কৌশলী প্রচারণা চালিয়ে প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীসহ অন্য প্রার্থীরা। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণার নিয়ম থাকলেও ২৮ জুন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কৌশলে বিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রভাবশালী হওয়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছেন না নগরবাসী। অন্যদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। বরিশাল সিটি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মাঠে রয়েছেন সাতজন মেয়র এবং ১১২ জন সাধারণ ও ৩৭ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী। আগামীকাল ৯ জুলাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং পরদিন ১০ জুলাই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে দেওয়া হবে প্রতীক বরাদ্দ। আইন অনুযায়ী এর পরই আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। কিন্তু বরিশালে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সাত মেয়র প্রার্থী কর্মিসভা, মতবিনিময় ও গণসংযোগের আড়ালে প্রতিদিন প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ গতকাল সকালে নগরীর মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কীর্তনখোলা নদীর দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত সুবিধাবঞ্চিত চরজাগুয়ায় গণসংযোগ করেন। সাদিক আবদুল্লাহ ওই এলাকার মানুষের বিভিন্ন নাগরিক সমস্যার কথা শোনেন এবং নির্বাচিত হলে সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন।

 এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম তোতা, দলের মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম জাহাঙ্গীর, সহসভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বরিশাল নগরীতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা অফিসে গণসংযোগ ও মতবিনিময় করেন। বিকালে তিনি নগরীর পশ্চিম কাউনিয়ার নিজ বাসভবনে ৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোডের নিজ বাসভবনে সুধীজনসহ জাতীয় পার্টির বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ভোট কেন্দ্রভিত্তিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এ ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এ কে আজাদ, বাসদের ডা. মনীষা চক্রবর্তী এবং খেলাফত মজলিসের প্রার্থী এ কে এম মাহবুব আলমও নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ চালান।

শুধু মেয়র প্রার্থীরাই নন, নগরীর ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী ১১২ এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৭ জন প্রার্থী গত কয়েক দিনের মতো গতকালও নিজ নিজ ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন।

সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার ও প্রার্থীদের নিজ দলের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, মেয়র প্রার্থীরা গণসংযোগের আড়ালে প্রকারান্তরে তাদের দলের প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। কর্মিসভায়ও দলের প্রতীকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

তবে দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার কথা অস্বীকার করে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মেয়র প্রার্থীর মুখপাত্র অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণসংযোগ চালানোর ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তাদের প্রার্থী জনগণের সমস্যার কথা শুনেছেন এবং দোয়া চেয়েছেন মাত্র।

মহানগর বিএনপির সহকারী সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, তাদের মেয়র প্রার্থী এর আগেও চারবার সদর আসনে এমপি এবং একবার সিটি করপোরেশনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে তিনি ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল আছেন। আচরণবিধি মেনেই তাদের মেয়র প্রার্থী কর্মিসভাসহ গণসংযোগ করছেন। কর্মিসভায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। গণসংযোগকালে দোয়া চাইছেন।

জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল বলেন, তাদের প্রার্থী ধারাবাহিকভাবে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও কর্মিসভা করছেন। এতে তারা কোনো আইন ভঙ্গ করছেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর