বুধবার, ১১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিটি নির্বাচন : চারিদিকে উৎসবের আমেজ

প্রতীক পেয়েই প্রচারণায় প্রার্থীরা

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রতীক পেয়েই প্রচারণায় প্রার্থীরা

দেশের তিন সিটি করপোরেশন (রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট) নির্বাচনে গতকাল প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়গুলোয় ছিল উৎসবের আমেজ। প্রতীক নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মেয়র প্রার্থীর উচ্ছ্বাস না থাকলেও স্বতন্ত্র মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। কারণ এতদিন আড়ালে-আবডালে নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও প্রতীক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই বাধা কেটে গেছে। আর এই সুযোগে প্রার্থীদের শক্তির জানান দিতে বিভিন্ন কায়দায় শোডাউনের চেষ্টা করেছেন তারা। আর দলীয় মেয়র প্রার্থীরা তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো প্রতিবেদন—

রাজশাহী : সকাল ৯টায় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী, সাড়ে ১১টায় মেয়র ও ১২টায় সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঝে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ করেন রিটার্নিং অফিসার। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন নৌকা, বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ধানের শীষ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন) হাবিবুর রহমান হাবিব কাঁঠাল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শরিফুল ইসলাম হাতপাখা ও গণসংহতি আন্দোলনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ পেয়েছেন হাতি প্রতীক।

নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রথমে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। পছন্দের প্রতীক পেয়ে স্লোগান দিতে দিতে কর্মীদের নিয়ে তারা ফিরে যান নির্বাচনী এলাকায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় মেয়র প্রার্থীদের। প্রার্থীরা না এলেও তাদের সমন্বয়কারীরা প্রতীক গ্রহণ করেন। এ সময় বিএনপি প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু অভিযোগ করেন, সরকারি দলের লোকজন তাদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের নৌকার পক্ষে কাজ করতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের কাছেও তিনি এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ অভিযোগ করেন, সাড়ে ১১টায় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হলেও নগরীজুড়ে ভোর থেকেই দলীয় প্রতীক পাওয়া প্রার্থীরা পোস্টার ও বিলবোর্ড ঝুলিয়েছেন। এদিকে দুপুর ১২টার পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী। নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রচারণা শুরু করেন বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আর ইশতেহার ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রচারণায় নামেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। বরিশাল : বরিশালে সকাল ১০টা থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ৬ মেয়র, ৯৪ সাধারণ ও ৪৫ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং অফিসার মো. মুজিবুর রহমান। বিভিন্ন দলের ৬ মেয়র প্রার্থীর মাঝে আগে থেকে নির্ধারিত দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কোনো প্রার্থী একক প্রতীক চাইলে তাদের সেই প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে একই ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী এক প্রতীক চাইলে তাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। কোনো কোনো ওয়ার্ডে আবার সমঝোতার মাধ্যমে প্রার্থীকে তাদের পছন্দের প্রতীক ছেড়ে দেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। দুপুর ১২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে ধানের শীষ প্রতীক গ্রহণ করেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া। এর পরই আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে নৌকা প্রতীক গ্রহণ করেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস লাঙ্গল, কমিউনিস্ট পার্টির এ কে আজাদ কাস্তে, বাসদের ড. মনীষা চক্রবর্তী মই ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব হাতপাখা প্রতীক বরাদ্দ পান। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন বাসদের ডা. মনীষা চক্রবর্তী। দুপুর ১টায় সদর রোডে দলীয় কার্যালয় চত্বরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ধানের শীষের স্লোগানের মধ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। যদিও তিনি দলীয় কার্যালয়ে দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর কথা বলেন। বিকাল সাড়ে ৪টায় নগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোডে নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রচারণা শুরুর কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে একযোগে নৌকার মিছিলের মাধ্যমে সাদিক আবদুল্লাহর প্রচারণা শুরুর কথা বলেন দলের মুখপাত্র গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল।

সিলেট : সকাল ১০টায় প্রথমে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নৌকা, বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষ, সিপিবি-বাসদ প্রার্থী আবু জাফর মই, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন হাতপাখা, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বাস গাড়ি, স্বতন্ত্র প্রার্থী সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের টেবিলঘড়ি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের হরিণ প্রতীক পেয়েছেন। প্রতীক পাওয়ার পর নেতা-কর্মীদের নিয়ে শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে যান কামরান। মাজার জিয়ারত শেষে দরগাহ এলাকা থেকেই প্রচারণা শুরু করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনকে নেতা-কর্মীরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। নগরবাসীর প্রতি আমার আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। আশা করি তারা ৩০ জুলাইর ভোটে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করবেন।’ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীও যান শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে। মাজার জিয়ারত শেষে হাতে ধানের শীষ নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন আরিফ। এ সময় সদ্য সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘বিগত সিটি নির্বাচনে নগরবাসী অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন। এবারও প্রতিকূলতার মধ্যে এই পুণ্যভূমি সিলেটে সব অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইনশা আল্লাহ জনগণ ধানের শীষে ভোট দেবেন।’ পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে অভিযোগ করে আরিফ বলেন, ‘পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন প্রিসাইডিং অফিসারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে। তারা কেন প্রিসাইডিং অফিসারদের বাড়ি যাবে? আমরা চাই, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করুক। সবার জন্য যেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে।’ গতকাল বিকালে আরিফ ও কামরানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়।

এদিকে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র প্রার্থী হওয়ায় সিলেট মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমকে গতকাল বহিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য বহিষ্কার নিয়ে না ভেবে প্রচারণা শুরু করেছেন এই মেয়র প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে না হলেও পরোক্ষে আমার পক্ষে কাজ করবেন।’

সর্বশেষ খবর