শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

আইনজীবী মঞ্জুরুল হত্যা মামলার রায়ে বিব্রত হাই কোর্ট

আহমেদ আল আমীন

খুলনার আলোচিত মঞ্জুরুল ইমাম হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণায় বিব্রত হয়েছে হাই কোর্ট। হাই কোর্টে এই মামলায় গতকাল রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে আদালত বিব্রতবোধ করায় এখন মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য নতুন বেঞ্চে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম ছিলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সাবেক সদস্য। ২০০৩ সালের ২৫ আগস্ট সকালে রিকশাযোগে আদালতে যাওয়ার পথে নিজ বাসার কাছে সন্ত্রাসীদের বোমা ও গুলিতে নিহত হন। সেদিন নিহত হন তার সঙ্গে থাকা রিকশার আরেক আরোহী আইনজীবী বিজয় বিহারী মণ্ডল ও রিকশাচালক সাইদুল ইসলাম আকনও।

সকাল ১০টার দিকে দুজন আইনজীবীসহ প্রকাশ্য দিবালোকে তিনজনের এই নিহতের ঘটনা ট্রিপল মার্ডার হিসেবে সে সময় সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই মামলা হয়।

বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় চার্জশিটে আসামি হিসেবে চারজনের নাম আসে। আসামিদের মধ্যে ইমাম হাসান পরে ক্রসফায়ারে নিহত হয়। বিচারিক আদালত গণেশ ব্যানার্জি ও মো. বারী ওরফে রিপনকে খালাস এবং শুকুর গাজীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল খুলনার আদালতে এ রায়ের পর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাই কোর্টে আসে। এরই মধ্যে আসামি শুকুর গাজী আপিল ও জেল আপিলও করেন। এদিকে হত্যা মামলার রায়ে ২০০৮ সালে সব আসামিই খালাস পান।

দীর্ঘ কয়েক বছর পর পেপারবুকসহ আনুষঙ্গিক সব প্রক্রিয়া শেষে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়। গত মাসের শেষের দিকে হাই কোর্টে শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ ও আসামিপক্ষে আইনজীবী সারোয়ার আহমেদ শুনানিতে অংশ নেন। বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে দীর্ঘ শুনানি হয়।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে বলেছে, এ মামলার ৩, ১৫ ও ৪১ নম্বর সাক্ষী ও অন্যান্য তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগের সঙ্গে আসামির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে। তাই আসামির আপিল খারিজ করে ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করে সাজা বহাল রাখা হোক। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী নিম্ন আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার হয়নি দাবি করে হাই কোর্টে ন্যায়বিচারের আবেদন করেন। 

এ মামলায় হাই কোর্টে ৪ জুলাই ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষ হয়। এরপর ১২ জুলাই রায়ের জন্য দিন ধার্য করে আদালত। সে অনুযায়ী ক্রিমিনাল আপিল ও জেল আপিলসহ রাষ্ট্র বনাম শুকুর গাজী ২০/২০১১ নম্বরের ডেথ রেফারেন্সটি গতকাল হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় রায় ঘোষণার জন্য এক নম্বর ক্রমিকে আসে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে আদালত জানায়, বেঞ্চের একজন বিচারপতি এ মামলার রায় দিতে বিব্রতবোধ করেছেন। মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে নথি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হলো। আদালতের এ আদেশের বিষয়টি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আদালত বিব্রতবোধ করার পর মামলাটি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। প্রধান বিচারপতি অন্য কোনো বেঞ্চে পাঠালে মামলাটি সেখানে নিষ্পত্তি হবে।

সর্বশেষ খবর