শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র

৫ আগস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশ

গোলাম রাব্বানী

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন অনুমোদিত ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা’ পাঠানো হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ ৫ আগস্ট, দাবি আপত্তি শেষ করার তারিখ ১৯ আগস্ট, নিষ্পত্তির তারিখ ৩০ আগস্ট এবং ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত হবে ৬ সেপ্টেম্বর। গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি সব জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালা অনুযায়ী খসড়া কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ, দাবি-আপত্তি গ্রহণ এবং নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ইসির উপসচিব আবদুল হালিম খান জানান, সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র প্রয়োজন হবে। এ বড় কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে নীতিমালার আলোকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বুধবার কমিশন এ নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে। এর পরই মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হলো। এখন সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করে খসড়া তালিকা করা হবে আসনভিত্তিক। আপত্তি-নিষ্পত্তি শেষ করে কমিশনের কাছে পাঠাবেন মাঠ কর্মকর্তারা। পরে চূড়ান্ত করবে কমিশন। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, নবম সংসদে ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি (ভোটকক্ষ এক লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি)। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১৯ লাখ ভোটারের বিপরীতে ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭। এ সময় ৩০০ আসনে ভোটকক্ষ ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের বিপরীতে প্রয়োজন হবে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র। এতে ভোটকক্ষ প্রায় ২ লাখ। ৩০০ আসনের মধ্যে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র সমতল এলাকায় ৩৯ হাজার ৩৮৭টি এবং পার্বত্য এলাকায় ৬১৩টি। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, অক্টোবরের মধ্যে ৩০০ আসনের ভোটার তালিকার সিডি ও ভোটার তালিকা মুদ্রণ শেষ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপযুক্ত সময়ে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি।

কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, জুলাইয়ে নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক খসড়া তালিকা প্রকাশ ও দলের স্থানীয় অফিসে প্রেরণ; আগস্টে খসড়া তালিকার ওপর দাবি-আপত্তি ও নিষ্পত্তি; ভোটের ২৫ দিন আগে ইসি অনুমোদিত ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ এবং তফসিলের পর নিবন্ধিত দলগুলোর কাছে তালিকা পাঠানো হবে। বর্তমানে দেশে ১০ কোটি ৪২ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে।

ভোটকেন্দ্র নীতিমালায় বলা হয়েছে, গড়ে ২৫০০ ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকেন্দ্র এবং গড়ে ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য ও ৫০০ মহিলা ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভোটকেন্দ্র স্থাপনে যতদূর সম্ভব বিরত থাকতে হবে। যাতায়াত-ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধা বিবেচনায় কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। তবে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ নিয়ে বিভিন্ন প্রার্থীর অভিযোগও হরহামেশাই ওঠে। প্রতিবারই ভোটের আগমুহূর্তে ভোটকেন্দ্র পাল্টাতে তৎপরতা শুরু করেন কিছু প্রার্থী। ইসির উপসচিব ফরহাদ হোসেন জানান, সাধারণত আগের নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে ভোট হয়েছিল সেগুলো অপরিবর্তিত রাখা হয়। তবে নদীভাঙন ও দুর্যোগে ভোটকেন্দ্র বিলুপ্ত হলে নতুন ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। সেই সঙ্গে কিছু এলাকায় ভোটার বাড়লেও নতুন কেন্দ্র করতে হয়। মাঠ কর্মকর্তাদের সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ভোটকেন্দ্রের তালিকা করতে হবে। স্থানীয়ভাবে আপত্তি শুনানি থেকে প্রাথমিক খসড়া কমিশন অনুমোদন করে চূড়ান্ত করবে। তফসিল ঘোষণার পর ভোটকেন্দ্র কোনো প্রার্থীর বাড়ির কাছে বা প্রভাব-বলয়ের মধ্যে পড়ছে বলে প্রতীয়মান হলে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করা যাবে। তদন্ত শেষে অভিযোগের যথার্থতা থাকলে ইসি তা পরিবর্তন করতে পারে।

সর্বশেষ খবর