তাকে নিয়ে জল অনেক ঘোলা হয়েছে। বিদ্রোহ করায় বিএনপি থেকেও করা হয়েছে বহিষ্কার। সেই বদরুজ্জামান সেলিম অবশেষে সরে দাঁড়িয়েছেন নির্বাচন থেকে। ঘোষণা দিয়েছেন দলীয় মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে কাজ করার। একই  সঙ্গে ফিরে পেয়েছেন দলীয় পদও। গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আরিফের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন সেলিম। দলের বিদ্রোহী সরে যাওয়ায় বিএনপির চোখ এখন জামায়াতে ইসলামীর দিকে। স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জামায়াত নেতাকেও নির্বাচন থেকে সরাতে তৎপর বিএনপি। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে এবার বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে মহানগর সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও ছিলেন। তবে দল থেকে সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে প্রার্থী হন সেলিম। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু বহিষ্কৃত হয়েও দমে যাননি সেলিম, নির্বাচনী প্রতীক ‘বাস’ পেয়ে চালিয়ে যান প্রচারণা। তবে পরিস্থিতি পাল্টে যায় বুধবার দিবাগত রাতে। নগরীর হাজারীবাগে সেলিমের বাসায় যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও কেন্দ্রীয় সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম। সেখানে উপস্থিত হন মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। তারা সবাই সেলিমকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান। তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি সেলিম। তিনি ভেবে দেখতে সময় নেন। রাতে আরিফসহ বিএনপি নেতারা সেলিমের বাসায় খাবার খেয়ে ফেরেন। আমান ও নাজিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে সেলিম নিজেই জানিয়েছেন। গতকাল সকালে সেলিমের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করেন বিএনপি নেতারা। তখন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান সেলিম। এর আগে নিজের মা ও স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। গতকাল বেলা ৩টায় আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ উপস্থিত ছিলেন। নিজের মা ও স্ত্রীকে পাশে নিয়ে সেখানে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বদরুজ্জামান সেলিম।

এ সময় সেলিম বলেন, ‘বিএনপি আমার রক্তে, আমার শিরায় শিরায়। কাল যখন তারা আমার বাসায় এসে অনুরোধ করেছেন, সেটি আমি ফেলতে পারিনি। তাই আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।’ এ সময় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করারও ঘোষণা দেন সেলিম।

এদিকে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে ‘দমানোর’ পর এবার বিএনপির চোখ জামায়াতের প্রার্থীর দিকে। সিসিক নির্বাচনে মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। ২০-দলীয় জোটসঙ্গী জামায়াত প্রার্থী দেওয়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে আছেন বিএনপির প্রার্থী আরিফ। এজন্য জামায়াতকে নির্বাচন থেকে সরাতে চলছে জোর চেষ্টা। বদরুজ্জামানের ক্ষেত্রে সফলতা আসায় জামায়াতকেও বসানো যাবে, এমন আশা বাড়ছে বিএনপিতে। এ বিষয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘জামায়াত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।’

এ বিষয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আমরা আশাবাদী, জামায়াতও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে ধানের শীষের প্রার্থী আরিফের পক্ষে মাঠে নামবে। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ চলছে।’ বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে পাওয়া যায়নি।