শিরোনাম
শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভারতে ছুটছে বগুড়ার রোগীরা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় চিকিৎসাসেবার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি চিকিৎসকরা সময় দিচ্ছেন বেশি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে অতিমাত্রার প্যাথলজি পরীক্ষা, সময়মতো চিকিৎসকের সাক্ষাৎ না পাওয়ার ভোগান্তি, বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত বেড ভাড়া, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে আর্থিক খরচ বেড়ে যাচ্ছে রোগীর স্বজনদের। এরপরও রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের সত্যত্য মিলেছে সরকারি হাসপাতাল ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা বেশকিছু বেসরকারি ক্লিনিকের রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে। অনেকেই চিকিৎসা নিতে চলে যাচ্ছেন ভারতে।

বগুড়া সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় মঞ্জুরীকৃত সরকারি চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৩০ জন। মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন ১২৯ জন। শূন্য পদ রয়েছে ২০১ জন। বগুড়া সিভিল সার্জন, স্কুল হেলথ ক্লিনিক, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিকসহ উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগীয় জনবল মোট চাহিদা পদ রয়েছে ২ হাজার ৪৫৪টি। বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ১ হাজার ৮০০ জন। এর মধ্যে ২০১ জন চিকিৎসক এবং ৩৯৯ জন রয়েছে বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী।  জানা যায়, সরকার ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক  নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু বগুড়ার ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভয়াবহ চিকিৎসক সংকট রয়েছে। ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো থেকে গ্রামীণ মানুষজন কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে সদরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটছে।

 

জেলার ৯৯টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ১৭টি কেন্দ্রে হাতে গোনা চিকিৎসক নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। শিবগঞ্জ উপজেলার ৯টি কেন্দ্রে, দুপচাঁচিয়ার ৬টি কেন্দ্রে এবং ধুনটের ১০টি কেন্দ্রের একটিতেও কোনো চিকিৎসক নেই। অন্যান্য উপজেলার ইউনিয়ন কেন্দ্রে দুই-একজন করে চিকিৎসক আছে। তাদের মধ্যে অনেকে ডেপুটেশনে অথবা উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন।

বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়ায় পাবনা থেকে হাঁটুর ব্যথার চিকিৎসা নিতে আসা আশরাফুল ইসলাম জানান, বগুড়ায় ভালো ডাক্তার আছে শুনে এসেছি সেই ভোরবেলা। সন্ধ্যা হয়ে চলেল ডাক্তারের সিরিয়াল পাচ্ছি না। ৪৩ নাম্বার সিরিয়াল পেয়েছেন। ভিজিট নিচ্ছে ৬০০ টাকা। এর আগে তিনি অন্য এক ডাক্তার দেখান ব্যথা ভালো না হওয়ার কারণে আবার এসেছেন। বগুড়া শহরের নারুলী এলাকার হৃদরোগে আক্রান্ত সাজ্জাদ আলী জানান, তিনি বগুড়ায় ভালো চিকিৎসা না পেয়ে ভারতের চেন্নাই থেকে হার্টের চিকিৎসা করে এখন সুস্থ রয়েছেন। তিনি বলেন, বগুড়ায় সময়মতো ডাক্তার আসেন না। ভিজিট বেশি। ভালো করে কথা না শুনেই পছন্দের কোম্পানির ওষুধের নাম লিখে দিচ্ছেন। দেশে থাকাকালে যে খরচ হয়েছে তার প্রায় সমান খরচ হয়েছে ভারতে। তবে বগুড়ার কিছু চিকিৎসক বলেছেন, ভারতে চিকিৎসা নিচ্ছেন যাদের আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে। চিকিৎসকরা ভালো সেবার বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ও বগুড়া বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা. রেজাউল আলম জুয়েল জানান, শুধু এই জেলার নয়, বিভিন্ন জেলা থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। হাসপাতালের বেড ৫০০ কিন্তু রোগী থাকে প্রায় ১১০০ থেকে ১২০০ জন। তারপরও সেবা দিতে তারা ২৪ ঘণ্টা তৎপর হয়ে আছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. শামছুল হক জানান, আমাদের কিছু শূন্য পদ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে শূন্য পদগুলো পূরণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা আগের থেকে আরও ভালো। মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর