বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি

বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না শিক্ষক সমিতি উপাচার্যকে ছাত্রলীগের স্মারকলিপি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

স্বাধীনতার ৪৭ বছরে দাঁড়িয়ে যখন জাতির জনককে আঘাত করা হয়, তখন এ দেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গায় আঘাত করা হয়, দেশের মানুষের প্রতিটি ধমনিতে আঘাত করা হয়। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ডুটা) এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে এক মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এস এম মাকসুদ কামাল এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ মানববন্ধন হয়। ১৯ জুলাই নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আকমল হোসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করে বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। শিক্ষক সমিতি ওই শিক্ষকের বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে মঙ্গলবার একটি বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে তারা অধ্যাপক আকমল হোসেনের বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান। জবাবে অধ্যাপক আকমল হোসেন প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করেছি কোটা আন্দোলন এ দেশের ছাত্রদের অধিকারের আন্দোলন নয়।

কোটা আন্দোলন হলো নির্বাচনের বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে অস্থিতিশীল করে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতা নেওয়া যায় তার আন্দোলন। এ আশঙ্কা আমরা সেদিন থেকে করেছিলাম। আর সেদিনকার হাততালি থেকে সে আশঙ্কা প্রমাণিত হলো।’

তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের ভিতর জামায়াত-বিএনপি ঢুকেছে। আয়োজকরা অধ্যাপক আকমলের বক্তব্যের পর কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া করেননি। অধ্যাপক আকমল হোসেন যে অপরাধে অপরাধী, আয়োজকরাও একই অপরাধে অপরাধী। আয়োজকরা তাদের বসিয়ে রেখে হাততালি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এই হাততালি ছাত্রশিবির-বিএনপি-ছাত্রদলের হাততালি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি তিনি কটূক্তিকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিঃশর্ত ক্ষমা যদি চান এবং যদি বলেন, ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কথা বলবেন না, তাহলে শিক্ষক সমিতি বিবেচনা করে দেখবে ভবিষ্যতে কোনো কর্মসূচি দেবে কি না।

৩৭ বছরের শিক্ষকতা জীবনে অধ্যাপক আকমল হোসেন কী পড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে মাকসুদ কামাল বলেন, ‘অধ্যাপক আকমল ৩৭ বছর শ্রেণিকক্ষে পড়িয়েছেন। তিনি কি ৩৭ বছর এই বিষয়গুলো পড়িয়েছেন? মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তিনি ৩৭ বছর শ্রেণিকক্ষে বিভ্রান্তিকর তথ্য পড়িয়েছেন সেটিও খতিয়ে দেখার বিষয় আজকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলব ৩৭ বছর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে বাংলাদেশের ইতিহাস পড়াতে গিয়ে তিনি কী পড়িয়েছেন, সেখানে সিলেবাস কী আছে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় চীনপন্থি বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে বসে বসে মুক্তিযুদ্ধের সমালোচনা করছিলেন অভিযোগ করে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, বামপন্থি বুদ্ধিজীবীরা বলছিলেন, ভোটের বাক্সে লাথি মারো, বাংলাদেশ কায়েম করো। একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সৃষ্টি করার যে পথ বঙ্গবন্ধু উন্মোচন করতে চাইছিলেন, সেই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা তারা তখন করেছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ হলো দুই কুকুরের কামড়াকামড়ি; সুতরাং আমরা এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করব না।’ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর তারা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ দাঁড়িয়ে বলেন, ‘তার পিতা কি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন?’ এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি চুপ থাকতে পারে না। আমরা বিবৃতিতে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছি। সহকর্মীরা আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার কথা বলেছেন। আমরা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দেব আলোচনা করে।’

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

ছাত্রলীগের স্মারকলিপি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে কটূক্তিকারী আকমল হোসেনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। গতকাল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনের নেতৃত্বে তারা স্মারকলিপি দেয়। এতে তারা সাতটি দাবি জানায়।

সর্বশেষ খবর