মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাড়ছে অভিযোগ বাড়ছে অভিযান

আরাফাত মুন্না

বাড়ছে অভিযোগ বাড়ছে অভিযান

রাজধানীর ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্ট ‘চাপ সামলাও’। ১৫ টাকার বোতলজাত পানি বিক্রি করে ২০ টাকা। কোমল পানীয়র দামও বেশি নেওয়ার অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে থাকা এমন ২০টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করে গত ১ জুলাই প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। পরে আইন অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ দেওয়া হয়েছে অভিযোগকারীদের।

গত ঈদের সময় ঢাকা থেকে সিলেট যেতে সপরিবারে লন্ডন এক্সপ্রেস নামে একটি বাসে উঠেছিলেন মোস্তাকিমুল ইসলাম। তবে গাড়িটি সিলেটে না গিয়ে তাদের হবিগঞ্জে নামিয়ে দেয় ভোর ৪টায়। পরিবার নিয়ে বিপদে পড়েন ওই ব্যক্তি। ঈদ শেষে ঢাকায় এসে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করেন তিনি। প্রতিশ্রুত সেবা না দেওয়ার অভিযোগে লন্ডন এক্সপ্রেসকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার ২৫ শতাংশ পেয়েছেন অভিযোগকারী। একইভাবে ভোক্তার অভিযোগ নিষ্পত্তি করে সারা দেশে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৩ হাজার ৭২১টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অভিযোগ নিষ্পত্তির পাশাপাশি নিয়মিত বাজার অভিযানও পরিচালনা করছে সংস্থাটি। গত অর্থ বছরে ৪ হাজার ৫৮টি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ১৩ হাজার ৬০২টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে তারা। অভিযোগ নিষ্পত্তি ও অভিযানের মাধ্যমে ১৪ কোটি টাকা জমা হয়েছে সরকারের কোষাগারে। আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ পেয়েছেন অভিযোগকারীরা। ২০০৯ সালে ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে প্রত্যাশা অনুযায়ী কার্যক্রম চালাতে পারছে না। অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, ভোক্তা অধিকার নিয়ে জনগণ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। ভোক্তারা নিজেদের অধিকার আদায় করতে শিখেছে। ফলে কোথাও তারা অধিকার বঞ্চিত হলেই অভিযোগ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে আইনটি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিটি জেলায় আমাদের একজন কর্মকর্তা ও স্টাফ রয়েছে। জেলাগুলোতে আরও কর্মকর্তা ও স্টাফ প্রয়োজন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মুহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ বাস্তবায়নে তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে আমরা কাজ করি। প্রথমত প্রতিকারমূলক, ২য় প্রতিরোধমূলক ও ৩য় উন্নয়নমূলক। প্রতিকারমূলকের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যেমন বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো ও গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন আদেশ দেওয়া। প্রতিরোধমূলক কাজ হলো, যখন অধিদফতর মনে করবে কোনো প্রতিষ্ঠান ভেজাল দ্রব্য তৈরি করে তা বাজারজাত করার চেষ্টা করছে, সেটির বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া।

সূত্র জানায়, সারা দেশে ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে গত বছর ৯ হাজার ১৯টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৮ হাজার ৩৫টি। জরিমানা করা হয়েছে ৩ হাজার ৭২১টি প্রতিষ্ঠানকে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে অভিযোগ আসে ৬ হাজার ১৪০টি, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৬৬২টি, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে আসে ২৬৪টি এবং ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত অভিযোগ আসে মাত্র এক হাজার ৭৯৮টি। এ ছাড়া বাজার অভিযানও বাড়িয়েছে অধিদফতর। ২০১৫-২০১৬ সালে এক হাজার ৩৯৪টি অভিযানে ৫ হাজার ৫৯টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। ২০১৬-২০১৭-তে তিন হাজার ৪৩৭টি অভিযানে ১০ হাজার ৭২৯টি প্রতিষ্ঠান ও ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৮টি অভিযানের মাধ্যমে ১৩ হাজার ৬০২টি প্রতিষ্ঠানকে নানা অঙ্কে জরিমানা করা হয়।

সর্বশেষ খবর