শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

তাবলিগে অস্থিরতার নেপথ্যে কারা?

চাইছে নতুন মতবাদ সৃষ্টি করতে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

বিশ্ব তাবলিগের ওপর একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। সেজন্য তারা সুপরিকল্পিতভাবে বিশ্ব তাবলিগ জামাতকে অস্থির করে তুলেছে। এ অস্থিরতার হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতেও। এর রেশ ধরে দুই গ্রুপে বিভক্ত বাংলাদেশের তাবলিগ জামায়াত। ফলে ঘটছে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা— এই অভিমত দিল্লির নিজামুদ্দিন তথা বিশ্ব তাবলিগের আমির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির অনুসারীদের। তবে সাদ অনুসারীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্মমহাসচিব ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘মাওলানা সাদ তাবলিগের মূল আদর্শ থেকে সরে গেছেন। তিনি নতুন একটি মতবাদ সৃষ্টি করতে চাইছেন। তাই সারা বিশ্বের আলেমরা তাকে বয়কট করছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাবলিগ নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের যে কথা বলা হচ্ছে তা রাজনৈতিক বক্তব্য। এর সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই।’ সাদ অনুসারী তাবলিগের অন্যতম মুরব্বি চট্টগ্রাম লাভলেইন মারকাজের মজলিসে শূরার সদস্যসচিব আবদুল হালিম বলেন, ‘এতদিন তাবলিগ যেভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল, সেভাবেই চলবে তাবলিগের কার্যক্রম। বাইরে থেকে কেউ এসে তাবলিগের নিয়ন্ত্রণ করুক তা আমরা চাই না।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ব তাবলিগ জামাতে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ২০১৫ সালে। পাকিস্তানের রাইবেন মারকাজের একক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা ও বিশ্ব তাবলিগের প্রাণকেন্দ্র দিল্লির নিজামুদ্দিন থেকে পাকিস্তানের রাইবেনে নিয়ে যেতে পরিকল্পনা করে একটি অংশ। ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের রাইবেনে একটি ‘আলমে শূরা’ বা বিশ্ব শূরা কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের আমির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভিসহ যে ১১ জনকে স্থান দেওয়া হয় তাতে বাংলাদেশের তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা জুবায়ের, মাওলানা রবিউল হক ও ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসিকুল ইসলাম ছিলেন।

কিন্তু ওই কমিটি কার্যকর হলে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের আমির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির একক ক্ষমতা খর্ব এবং বিশ্ব তাবলিগের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হবে— এ চিন্তা থেকে এই কমিটির বিরোধিতা করেন মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীরা। এর পর থেকে একে অন্যকে ঘায়েলে নেমে পড়েন তারা। ২০১৬ সালের আগে দেওবন্দ অনুসারী আলেমরা জোটবদ্ধ হয়ে মাঠে নামেন। ২০১৭ সালের শুরুতেই সংঘবদ্ধ হয়ে নামলেন দেওবন্দ অনুসারী  আলেমরা। তারা টঙ্গী ইজতেমা শুরু হওয়ার আগে ওজাহাতি জোড়ে (পরামর্শ সভা) এক প্রকার কোণঠাসা করে ফেলেন সাদ অনুসারীদের। ওই সভায় সাদ অনুসারী কোনো তাবলিগ মুরব্বিকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি। এর পর থেকে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু আলেম ও নেতা দেওবন্দ অনুসারীদের সমর্থন দেওয়া শুরু করেন। তাবলিগে দুই গ্রুপের বিভক্তি স্পষ্ট হওয়ার পর প্রভাব পড়েছে তাবলিগের নানান কর্মকাণ্ডেও। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ‘আলমে মাশোয়ারা’ বা বিশ্ব পরামর্শ সভা। এটি এ বছর হজের পর সৌদি আরবে হবে।

বিরোধী পক্ষের দাবি, মাওলানা সাদ তাবলিগের মূল স্রোত থেকে সরে গিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে তাবলিগের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইছেন। তাই বিশ্বের আলেমসমাজ সাদকে বয়কট করছেন। সাদবিরোধীদের দাবি, দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের আমির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভি ও তার অনুসারীরা কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করেন। সাদ নিজস্ব একটি মতবাদ সৃষ্টি করতে চাইছেন। তাবলিগের তিন মুরব্বি মাওলানা ইলিয়াস, মাওলানা ইউসুফ ও মাওলানা এনামুল হাসানের কর্মপদ্ধতির লঙ্ঘন করে মনগড়া পদ্ধতিতে তাবলিগ পরিচালনা করছেন। মাওলানা সাদ নবী ও রসুলদের অপবাদ এবং সাহাবিদের সম্পর্কে অশালীন বক্তব্য দিয়েছেন।

তাবলিগের মুরব্বি মোহাম্মদ আমির হোসেন বলেন, ‘পাকিস্তানি একটি গ্রুপ বিশ্ব তাবলিগের নিয়ন্ত্রণ ভারত থেকে সরিয়ে পাকিস্তানে নিয়ে যেতে চাইছে। এ গ্রুপটি তাবলিগের মূল কেন্দ্র পাকিস্তানের রাইবেনে করতে চাইছে। সাদ অনুসারীরা এ পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে চাইছেন বলে একটি গ্রুপ এর বিরোধিতা করছে।’ তাবলিগের মুরব্বি মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের কিছু নেতা-কর্মী তাবলিগকে নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছেন। তাই তারা সুপরিকল্পিতভাবে নানান কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় তাবলিগ জামাতের ওপর হামলা করছে। আমরা হেফাজতে ইসলামমুক্ত তাবলিগ জামাত চাই।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর