শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

জনদুর্ভোগকে পুঁজি করে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে পাঠাও-উবার

মাহবুব মমতাজী

জনপ্রিয় হচ্ছে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ। সেই সঙ্গে দফায় দফায় ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগেরও কমতি নেই তাদের বিরুদ্ধে। তবে এই চিত্র তীব্র আকার ধারণ করে গত কয়েক দিন ধরে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, জনদুর্ভোগের সুযোগে নানা অজুহাতে অ্যাপসে নির্ধারিত ভাড়ার বদলে চুক্তিতে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য সময়ে পিক আওয়ার, ঝড়-বৃষ্টি আর নানা অজুহাতে সেই ভাড়া বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে গ্রাহক সংখ্যা বাড়ায় ভাড়া বাড়তি রেখে সেবা দিতে হচ্ছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে নিবন্ধনের বাইরে থাকা কোনো পরিবহনের সুনির্দিষ্ট ভাড়ার নির্দেশনা নেই বলেও জানায় বিআরটিএ।

ব্যক্তিগত গাড়িকে উন্মুক্ত করে ভাড়ায় বারোয়ারি খাটাবার পদ্ধতি নিয়ে গত বছর ঢাকায় নামে উবার, পাঠাওসহ বেশকিছু রাইড শেয়ারিং অ্যাপ। সপ্তাহে ২০ হাজার টাকা, মাসে ৮০ হাজার টাকা এমন আকর্ষণীয় অফারে সংগ্রহ করা হয় এসব ব্যক্তিগত গাড়ি ও চালক।

কাকলীতে বনানী পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বৃহস্পতিবার কথা হয় তোফাজ্জল নামে এক পাঠাও অ্যাপসে নিবন্ধিত মোটর বাইকারের সঙ্গে। তিনি জানান, রাস্তায় গণপরিবহনের সংকটে অ্যাপে রিকুয়েস্টের অনেক চাপ বেড়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখোমুখি হয়ে মোটরসাইকেল চালাতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাপসের বদলে চুক্তিভিত্তিক চালানোটাই স্বাভাবিক। সরেজমিন দেখা যায়, হাতিরঝিলের মহানগর পয়েন্ট, আড়ং পয়েন্ট,  নাবিস্কো, মহাখালী, সৈনিক ক্লাব, ফার্মগেট, বাংলামোটর ও মগবাজার মোড়ে ৫-৬ জন পাঠাও এবং উবারের বাইকারকে নিজ নিজ বাহন নিয়ে জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় তাদের আশপাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীদের ডাকতেও শোনা যায়। নাবিস্কো এলাকায় কথা হয় শফিকুর নামে একজন উবার চালকের সঙ্গে। তিনি তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এ প্রতিবেদককে জানান, এ পর্যন্ত তিনি প্রায় দুই হাজার ট্রিপ মেরেছেন। কখনো কখনো সপ্তাহে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করেছেন। আন্দোলনে তাদের চাহিদা বেড়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, গণপরিবহনের এই সংকটে উবারের ভাড়া গাড়িতে ঢাকার মধ্যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে ২৫০০ টাকা চেয়ে বসে। এই খরচে যদি নিয়মিত চলাচল করতে হয়, তাহলে নিজেরাই একটা গাড়ি কিনে ফেলা যায়। অ্যাপ কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, অফিস আওয়ারে যাত্রীদের গাড়ির চাহিদা পূরণ করতেই ভাড়া বাড়ানো হয়। অফিস আওয়ারে একসঙ্গে ৩০ জন পর্যন্ত যাত্রী চেষ্টা করছেন একটি গাড়ি পাওয়ার জন্য। এমন অবস্থায় আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য ভাড়ার ভিন্নতা তুলে ধরি। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, যখন বাণিজ্যের প্রসার ঘটে তখনই এক ধরনের অরাজকতা দেখা দেয়। তাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণের জন্য গোড়াতেই হাত দিতে হবে। নইলে পরবর্তীতে সে কাজ কঠিন হয়ে পড়ে। আর জনগণের জানমালের দায়িত্ব সরকারের। তাই সরকারকেই রাইড শেয়ারিংয়ের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। যদিও সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি আইন করেছে, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। বিআরটিএর সড়ক নিরাপত্তা শাখার উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ এ প্রতিবেদককে জানান, রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো তাদের নিবন্ধনের আওতায় কিনা সে সম্পর্কে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে কোনো গাড়ি নিবন্ধিত না হলে তার ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর