শুক্রবার, ১০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

হুমকিতে লোহাগাড়া রাবার ড্যাম

টংকাবতী খালে অবৈধ বালু উত্তোলন

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

হুমকিতে লোহাগাড়া রাবার ড্যাম

টংকাবতী খালের বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে রাখা হয়েছে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার টংকাবতী খালের ‘টংকাবতী রাবার ড্যাম’র পাশে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নির্বিচারে তোলা হচ্ছে বালু। ব্যাপক হারে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকার চাষাবাদের জন্য তৈরি হওয়া রাবার ড্যাম। ড্যাম বেইজের সিট পাইলিংয়ের কাছ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ড্যামটির একাধিক পয়েন্টে রাবারের জোড়া খুলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে করে শুষ্ক মৌসুমের জন্য ধারণ করা মিঠাপানি বের হয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী চাষাবাদ মৌসুমে। শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয় কৃষকদের পানির চাহিদা মেটাতে লোহাগাড়া, আমিরাবাদ, কলা উজান এবং চরম্বা সীমান্তবর্তী স্থানে তৈরি করা হয় ‘টংকাবতী রাবার ড্যাম’। ২০০১ সালে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত র‌্যাবার ড্যামটির আওতায় ওই এলাকার প্রায় তিন হাজার একর ভূমিতে চাষাবাদ হয়। এ রাবার ড্যামের পানি দিয়েই স্থানীয় কৃষকরা পানির চাহিদা পূরণ করে আসছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চরম্বা বিবিবিলা মৌজায় টংকাবতী খালে একটি বালুমহালের ইজারা নেন আবুল কাশেম ওরফে বালু কাশেম। তিনি একটি মহাল ইজারা নিলেও বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। কয়েক মাস আগে লিজকৃত জায়গা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে এসে রাবার ড্যাম-সংলগ্ন এলাকায় খালের ওপর অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেন। অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়টি সদ্য বদলি হওয়া লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আফরিন কচি জানার পর অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে ইজারা বহির্ভূত খাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং উত্তোলনকৃত বালু জব্দ করা হয়। এর কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও পরে ফের রাবার ড্যাম এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করতে থাকে। সদ্য যোগদান করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু আসলামের কাছেও রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা কমিটি ও সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য পুনরায় একটি আবেদন দেন। কিন্তু এর পরেও  বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। গত ১২ জুলাই খালপাড় সংলগ্ন কিছু অসহায় লোকের জমির ফসল নষ্ট করে  স্কেভেটর নামিয়ে ড্রাম ট্রাক ভর্তি করে বালু বিক্রি করতে চাইলে জমির মালিক স্থানীয় শাহ আলম ও জিয়াউর রহমান বাধা দেয়। তখন বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের ব্যাপক মারধর করলে তারা গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় গত ১৪ জুলাই শাহ আলম বাদী হয়ে বালু সিন্ডিকেটের প্রধান ইসমাইল ওরফে মিন্টুসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে লোহাগাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। স্থানীয় এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে আমাদের লোহাগাড়া প্রতিনিধি বলেন, এ স্থানে এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে রাবার ড্যামের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এতে এলাকার হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া খালের পাড় ভেঙে গিয়ে ওই জায়গা-সংলগ্ন বসতবাড়ি খালে বিলীন হয়ে যাবে। তাই রাবার ড্যাম রক্ষা এবং মানুষের বসতঘর রক্ষার্থে অবিলম্বে এ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে রাবার ড্যাম হুমকির মুখে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টা খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে বালু উত্তোলনকারী আবুল কাশেম ওরফে বালু কাশেম বলেন, ‘যে জায়গা বালু উত্তোলনের ইজারা পেয়েছি সে জায়গা থেকেই বালু উত্তোলন করছি। এলাকার একটি গ্রুপ আমাকে হয়রানি করতেই এসব অভিযোগ করেছে।’

সর্বশেষ খবর