বুধবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

দখল-দূষণে ধুঁকছে শ্যামাসুন্দরী

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

দখল-দূষণে ধুঁকছে শ্যামাসুন্দরী

দখলে-দূষণে মরণ দশায় পরিণত হয়েছে রংপুর নগরীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া শ্যামাসুন্দরী খাল। ছবিটি নগরীর মুলাটোল এলাকা থেকে তোলা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রংপুর নগরীর ‘প্রাণ’ হিসেবে পরিচিত শ্যামাসুন্দরী খাল এক সময় নগরবাসীর কাছে আশীর্বাদ ছিল। কালের শ্যামাসুন্দরী এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। দখলে-দূষণে খালটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে। খালটির শ্রীবৃদ্ধিসহ দূষণমুক্ত করতে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও শ্যামাসুন্দরীর অস্তিত্ব ফেরানো যায়নি। অভিযোগ আছে, সংস্কার কাজে জড়িতদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শ্যামাসুন্দরী এখন ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি মশা-মাছির আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে। খালে জমে থাকা পচা আবর্জনার দুর্গন্ধে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ১৮৯৪ সালে খননের পর থেকে খালটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০১২ সালে রংপুর পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর ওই বছরই খালটি সংস্কার ও এর সৌন্দর্য বাড়াতে ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সংস্কারের নামে হরিলুট কারবার হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। খননের সময় খালটির প্রস্থ ছিল স্থানভেদে ৬০ থেকে ১২০ ফুট। কিন্তু খালের দুই পাড় অবৈধভাবে দখল করে বসতবাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় খালের প্রশস্ত ১৫ ফুটে দাঁড়িয়েছে। দুই পাড়ের বাসিন্দারা বাড়ির ল্যাট্রিনের লাইন খালের সঙ্গে যুক্ত দেওয়ায় মলমূত্র সরাসরি খালে এসে পড়ছে।

অনেকেই বাড়ির আবর্জনা ও বর্জ্য খালেই ফেলছে। মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক সোহরাব আলী দুলাল বলেন, নগরীর প্রাণ শ্যামাসুন্দরীর সৌন্দর্য বাড়াতে অনেক টাকা খরচ করার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু সৌন্দর্য বাড়েনি, শ্যামাসুন্দরী শ্রীহীন হয়ে  পড়েছে। নাক চেপে ধরে খালের পাশ দিয়ে চলাচল করতে হয়। ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার বাসিন্দা ব্যাংকার আফরোজা পারভীন বলেন, শ্যামাসুন্দরীর দুর্গন্ধ আর মশার উৎপাতে বাড়িতে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে গত ১৫ এপ্রিল জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার রংপুর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শ্যামাসুন্দরী খালের দুই পাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা নদী ও খাল রক্ষা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব বলেন, খালটি দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। শ্যামাসুন্দরী খাল দখল-দূষণমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, নির্বাচনের সময় শ্যামাসুন্দরীর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস হয়েছে। এরই মধ্যে শ্যামাসুন্দরী সংস্কারে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর