শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
স্বস্তি শুধু ট্রেনে

ঢাকা ছাড়ছে লাখো মানুষ

সাঈদুর রহমান রিমন

কাঠফাটা রোদ, ভ্যাপসা গরম নানা দুর্ভোগ ভোগান্তিকে সঙ্গী করেই ঘরমুখো হচ্ছে লাখো মানুষ। নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও সড়কপথে পদে পদে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। তবে স্বস্তিতেই চলছে ট্রেনযাত্রা। ঈদপূর্ব ট্রেনের টিকিট সংগ্রহে নানা ধকল পোহানো যাত্রীরাও ট্রেনে উঠতে পেরেই আনন্দের হাসি হাসছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ট্রেনযাত্রা করতে পেরে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হতে পেরেছেন তারা। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রেলওয়ে আগাম টিকিটের ট্রেন যাত্রা শুরু হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে ঘরমুখো হাজারো মানুষ নিয়ে ঈদের ট্রেন যাত্রা শুরু হয়েছে। সকালে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ‘বলাকা কমিউটার’ কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায়। তারপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত একে একে ৪৯টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সময়ে আরও ১৭টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাবে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে। কমলাপুর স্টেশনের মূল ফটকে টিকিট দেখিয়ে ভিতরে ঢুকতে হচ্ছে এবং টিকিটবিহীন কাউকে প্ল্যাটফরমেও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। স্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন র‌্যাব, পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ আনসার সদস্যরা। রোভার স্কাউট ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা যাত্রীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন। অন্যদিকে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ট্রেনের ছাদে ও ইঞ্জিন বগিতে বিপজ্জনক ভঙ্গিতে ঝুলে থাকা যাত্রীদের নামিয়ে বগির ভিতরেই ঠাঁই করে দিয়েছেন। কিন্তু ঈদযাত্রা শুরুর আগে থেকেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মহাসড়কে যে যানজটের সীমাহীন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি ট্রাফিক সপ্তাহ পালন শেষে ঢিলেঢালা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মধ্যেই শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। ফলে বহু স্থানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকাসহ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তবুও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদুল আজহার আনন্দ ভাগাভাগি করতে ভোগান্তি, শঙ্কা ঘরমুখো যাত্রীদের থামাতে পারেনি। দুপুরের পর পরই টার্মিনালের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়া মানুষজন তীব্র গরমে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়েন। যাত্রীদের ভিড়ে রাজধানীর স্টেশন, টার্মিনাল ও লঞ্চঘাট মুখে ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই অবস্থা। রাজধানী থেকে বাড়িমুখী মানুষজন ঘর থেকে বেরোতেই রিকশা, সিএনজির মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া, পথে পথে ঈদ বকশিশের চাঁদাবাজিসহ নানা ভোগান্তির পর বাস টার্মিনাল কিংবা কাউন্টারে পৌঁছাতে পেরেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। সর্বত্রই যানবাহনের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী চোখে পড়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কে রয়েছে যানজট। টার্মিনালে অপেক্ষার পর যানবাহনে উঠতে পারলেও পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে কাটাতে হলে জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। একইভাবে বিকাল থেকেই যাত্রীদের ঠাঁসা ভিড় জমে ওঠে সদরঘাট নৌবন্দরে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জনপদের হাজার হাজার যাত্রীর উপচেপড়া ভিড়ে দম বন্ধের পরিবেশ সৃষ্টি হয় সদরঘাটে। ভিড় এড়াতে অনেক যাত্রীকে মহিলা ও শিশুদের নিয়ে আশপাশের মার্কেট ও দোকানের কোণে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কারণে গতকাল কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসতে দুই ঘণ্টার স্থলে সময় লেগেছে ৭ ঘণ্টা। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলেন, যারা যানজট নিয়ন্ত্রণ করবে তারাই যানজট সৃষ্টি করছে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে যানজট ততই বেড়ে চলছে বলেও বাস চালকরা অভিযোগ করেছেন। দাউদকান্দির জিংলাতলা থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে কোথাও না কোথাও এই যানজট লেগেই আছে। যানজটের কারণে কিছুসংখ্যক গাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-নরসিংদী হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু ওই সড়কের অন্তত ২০টি স্থানে পুলিশি চেকপোস্ট রয়েছে। সেখানে গাড়িগুলো থামিয়ে তল্লাশির নামে অহেতুক সময়ক্ষেপণ করানোর ঘটনায় দীর্ঘ যানজট হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। গাবতলী থেকে ছেড়ে যাচ্ছে খুলনা, বরিশাল, উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রাম রুটের গাড়ি। বাসের টিকিট সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। তাছাড়া সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা কোনো কাউন্টারে লক্ষ্য করা যায়নি। যাত্রীদের কল্যাণে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া, ফিটনেসবিহীন বাস পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ যাবতীয় ভোগান্তি দূর করার উদ্দেশে রয়েছে বিআরটিএর ভিজিলেন্স টিম।

কোচ চালকরা জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের রাজশাহী-চাঁপাই রুটে এবং রংপুর-দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধ শতাধিক পশুহাট জমে উঠেছে। এসব হাটের ধকল মূল রাস্তার ওপর পড়ার কারণে খুব ধীরগতিতে যানবাহন নিয়ে পারাপার হতে হয়। এ কারণেও পেছনে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর