সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে দেশি খুলনায় বিদেশি গরু

কোরবানির পশু বিক্রির শীর্ষে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও খুলনা

চট্টগ্রামে কোরবানির বাজারে পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু মিলছে। স্থানীয় উৎপাদন এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রাণীতেই চাহিদা পূরণ হচ্ছে। স্থায়ী-অস্থায়ী বাজারগুলোতে এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে পশু বিক্রয়। দামও ক্রেতার নাগালে। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ঈদুল আজহায় চট্টগ্রাম জেলায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৪১৪টি প্রাণী কোরবানি হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি প্রাণী উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪ লাখ ৩৮ হাজার  ৪২৪টি এবং ছাগল-ভেড়া উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৮১৯টি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আরও প্রায় এক লাখেরও বেশি প্রাণী বাজারে আসবে। গত বছর চট্টগ্রামে মোট কোরবানি দেওয়া হয়েছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩১টি প্রাণী। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রাণী ছিল ৪ লাখ ৮৯ হাজার। তার মধ্যে ছিল গরু-মহিষ ৪ লাখ ১৩ হাজার ৩৮৭ এবং ছাগল-ভেড়া এক লাখ ৮২ হাজার ৪৪১টি। চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলা ও নগর এলাকায় স্থায়ী-অস্থায়ী ১৯৭টি পশুর হাট আছে। এর মধ্যে স্থায়ী ৫৮টি ও অস্থায়ী ১৩৯টি। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রিয়াজুল হক বলেন, ‘ঈদুল আজহা  উপলক্ষে চট্টগ্রামে পশুর কোনো ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু এখন বাজারে আছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পশু মজুদ আছে।’ তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলায় ১৯৭টি পশুর হাটে জরুরি সেবা দিতে ৮২টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। প্রতিটি টিমে তিন থেকে সাতজন সদস্য থাকছে। স্থায়ী বড় বাজারগুলোতে সার্বক্ষণিক একাধিক টিম থাকবে। প্রত্যেক উপজেলায় প্রতিটি বাজারে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকবে। তা ছাড়া চট্টগ্রাম নগরের খুলশীতে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসেও একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।’ পশু বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রামের বাজারে যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নরসিংদী, দিনাজপুর ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু এসেছে। মহাসড়কে যানজট, ফেরি সমস্যাসহ নানা কারণে এখনো অনেক পশুবাহী ট্রাক পথে আছে। তা ছাড়া চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চকরিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, নাজিরহাট, হাটহাজারি, ফটিকছড়ি, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া থেকেও নগরীর বাজারগুলোতে পশু এসেছে। এদিকে খুলনা মহানগরীর বৃহৎ জোড়াগেট কোরবানির পশুর হাটে এবার বিদেশি নেপালিয়ান ও ফ্রিজিয়ান জাতের বড় গরু এসেছে। এদের দাম হাঁকা হচ্ছে আড়াই লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। নেপালিয়ান জাতের একটি গরু দুই লাখ আশি হাজার ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু তিন লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। তবে এ দামেও বিক্রেতারা সন্তুষ্ট নন। গরুর মালিক নড়াইলের আলামিন ফকির জানান, দুই বছর ধরে তিনি ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি লালন-পালন করেছেন। দুই বছরে গরুটির পেছনে তার ব্যয় হয়েছে এক লাখ টাকা। এখন গরুটির ১৬ মণ মাংস হয়েছে। তাই চার লাখ টাকা বিক্রি করলে লাভ হবে। এদিকে এবার হাটে মাঝারি ধরনের গরুর কদর বেশি। ক্রেতারা হাটে ঘুরে ফিরে ৬০-৭০ হাজার টাকা মূল্যের গরু খুঁজছেন। তবে ত্রেতাদের অভিযোগ, অন্যবারের তুলনায় গরুর দাম বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, আশপাশের জেলা নড়াইল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও যশোর থেকে প্রচুর গরু এসেছে। জেলা সদরসহ খুলনার ২৮টি পশুর হাটে জমে উঠেছে বেচাকেনা। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্য মতে, খুলনায় এবার প্রায় ৮০ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় সাড়ে ৪ হাজার খামার থেকে হাটে বিক্রিযোগ্য পশু এসেছে ৩৫ হাজারের মতো। ফলে অর্ধেকের বেশি চাহিদা মেটাতে আশপাশের জেলাগুলোর ওপর নির্ভর করতে হবে। হাটে আসা ক্রেতা মশিউর রহমান জানান, এবার গরুর দাম বেশি মনে হচ্ছে। গতবারের তুলনায় বিক্রেতারা অনেক বেশি দাম চাচ্ছেন। ফলে পছন্দের গরু কিনতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর