রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঈদ আনন্দ

বিনোদন কেন্দ্রে এখনো উপচে পড়া ভিড়

টগি ওয়ার্ল্ডে উচ্ছ্বাস শিশুদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিনোদন কেন্দ্রে এখনো উপচে পড়া ভিড়

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন-বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এখন মানুষের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। বিশেষ করে ছুটির শেষ দিনে গতকাল ছিল কেন্দ্রগুলো আরও জমজমাট।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক : রাজধানী ঢাকার পাশেই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল এশিয়ার বৃহত্তর এই পার্ক। ঈদের পর তিন দিন সাফারি পার্কে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে। এর মধ্যে কোর সাফারি পার্কের অংশে ছিল সবচেয়ে বেশি ভিড়। সেখান থেকে চারটি বাস ও দুটি জিপে চড়ে নির্ধারিত মাঠে থাকা উন্মুক্ত বাঘ, সিংহ, ভালুক, হরিণ, জেব্রা, জিরাফসহ বিভিন্ন জন্তু দেখেছেন দর্শনার্থীরা। তবে সাফারি পার্কে প্রবেশে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু পার্কে রয়েছে— বাইদ জমিতে পশুচারণভূমি, বিলুপ্ত ও দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ, কোর সাফারি, সাফারি কিংডম, বায়োডাইভারসিটি পার্ক, এক্সটেনসিভ এশিয়া সাফারি, বাঘের আস্তানা, সিংহের আস্তানা, চিত্রা হরিণ, কালো ভালুক, সাম্বার হরিণ ও জলহস্তীর আস্তানা। রয়েছে ডরমেটরি, বন্যপ্রাণী হাসপাতাল, ঝুলন্ত সেতু, ন্যাচারাহিস্ট্রি, পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, গুইসাপ পার্ক, ফেন্সি কার্প পার্ক, ক্রাউন ফিজেন্ট পাখিশালা, পেলিকেলপাখির জলাধারা, অতিথি পাখির জলাধারা, বার্ডশো গ্যালারি, অর্কিড হাউস, ফোয়ারা, প্রজাপতি, পেঁচা ও শকুনের আস্তানা, ক্যাঙ্গারু গার্ডেন, হাতি গ্যালারি, লেক ও জলাধারা ইত্যাদি। প্রকৃতির সমন্বয়ে গড়ে তোলা এ পার্কে দর্শনার্থীরা এসব দেখেন দূর-দূরান্ত থেকে এসে। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের মূল ফটকে আগত দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন। টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করছিলেন সবাই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি পার্কিং করার জায়গা পাচ্ছিলেন না আগত দর্শনার্থীরা। অন্যান্য সরকারি ছুটির চেয়ে এবারের ঈদে বেশি ভিড় জমে সাফারি পার্কে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ঈদের পরের দুই দিনের চেয়ে গতকাল ছিল দর্শনার্থীদের বেশি ভিড়। সাফারি পার্কে বড় বড় বাঘ, সিংহ, ভালুক, জিরাফ রয়েছে। এ ছাড়া মরুভূমির প্রাণি উটপাখি, ক্যাঙ্গারু, কুমির, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রজাপতি দর্শকদের মোহিত করে। কোর সাফারি অংশে দর্শকদের অপেক্ষমাণ দীর্ঘ সারি থাকলেও সেখানে গাড়ি সংকট রয়েছে। সেখানে গাড়ির সংখ্যা বেশি থাকলে লম্বা সারিতে দর্শকদের দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে হতো না। এবারের ঈদে দর্শনার্থীদের এত চাপ পড়বে তা আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিলাম। তাই অতিরিক্ত সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার পাশে গাজীপুরেও জমজমাট ছিল অর্ধ শতাধিক বেসরকারি রিসোর্ট। রিসোর্টগুলোতে ঈদের আগেই সবগুলো কক্ষ বুকিং ছিল। তারপরও বিনোদনপ্রেমীরা ভিড় জমান এসব রিসোর্টে।

টগি ওয়ার্ল্ডে উচ্ছ্বাসে মাতছে শিশুরা : বিকাল তিনটে বাজতেই বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের লেভেল-৮ এ বাড়তে থাকে শিশুদের ভিড়। তাদের ঈদ আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে রাজধানীর বৃহত্তম ইনডোর থিম পার্ক টগি ওয়ার্ল্ড। ঈদের ছুটিতে খেলাধুলায় মেতে উঠতে সাড়ে চারটার পর থেকে শিশুদের পদচারণায় কানায় কানায় ভরে ওঠে এই থিম পার্ক। সরেজমিন টগি ওয়ার্ল্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদের ছুটির শেষ দিনে ভিড় ছিল গত দুই দিনের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে রাইডে উঠতে দেখা গেছে শিশুদের লম্বা লাইন। দেখা গেছে, চোখে মুখে রাজ্যের আগ্রহ আর আনন্দ নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটছে শিশুরা। অনেকে নিজ হাতেই সংগ্রহ করছে টিকিট। থিম পার্কে ঢুকে হাজারও বিস্ময় নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে বাবা-মায়ের দিকে।  ঈদ উপলক্ষে টগি ওয়ার্ল্ডে বিশেষ কিছু গেমস প্যাকেজ ছাড়া হয়েছে। প্যাকেজগুলোকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে পাঁচটির অধিক গেমস এবং রাইড। তাই বেশি সময় খেলায় মেতে উঠতে শিশুদের প্যাকেজের দিকে ঝোঁক ছিল বেশি।ধানমন্ডির বাসিন্দা আট বছরের অনিরুদ্ধ টগি ওয়ার্ল্ডে এসেছিল বাবার সঙ্গে। কয়টি খেলার কয়েন সংগ্রহ করেছে- জিজ্ঞেস করলে জানায়, আমি এর আগে এখানে তিনটি গেমস খেলেছি আর দুইটা রাইডে উঠেছি। তাই এবার নতুন দুটি গেমস আর দুটি রাইডের টিকিট নিয়েছি। এর মধ্যে বাইক রেস, বাম্পার কারসহ আরও দুইটি গেমস আছে। এখানকার গেমসগুলো একদম নতুন হওয়ায় খেলতে খুব ভালো লাগে। টগি ওয়ার্ল্ডের ম্যানেজার (অপারেশনস) মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান বলেন, গতকাল বিকাল তিনটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার শিশু আমাদের থিম পার্ক টগি ওয়ার্ল্ডে বিভিন্ন ধরনের রাইড এবং গেম উপভোগ করেছে। বিকাল সাড়ে চারটা থেকে ৯টা পর্যন্ত ভীষণ ভিড় ছিল। আজ থেকে বুধবার পর্যন্ত টগি ওয়ার্ল্ড বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।

চিড়িয়াখানায় লক্ষাধিক দর্শক : চিড়িয়াখানায় গতকালও ছিল লক্ষাধিক দর্শনার্থী। নানা বয়সী মানুষের আগমনে গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুখরিত ছিল রাজধানীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গণ। তীব্র গরম, রোদ আর হালকা বৃষ্টি উপেক্ষা করে পরিবারের ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মেতে ওঠেন ঈদ আনন্দে।

 

গতকালও রাজধানীর চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল, শিশু পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, আগারগাঁওয়ে বিমান বাহিনী জাদুঘর এবং বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার দেখতে বেরিয়েছেন। বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় ছিল। রাজধানীর শাহবাগের শিশুপার্কের নভোযান, এসো গাড়ি চড়ি, রেলগাড়ি, চাকা পায়ে চলাসহ প্রতিটি রাইডে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। তবে ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বেশি লোকের সমাগম হয় হাতিরঝিলে। বিকাল থেকেই নগরবাসীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে হাতিরঝিল। আগত বিনোদনপ্রেমীরা উপভোগ করেন এখানকার সৌন্দর্য। দর্শনার্থীরা চক্রাকার বাস ও ওয়াটার বোটে ঘুরে বেড়িয়েছেন লেকে। আবার অনেকেই ঝিলের পাড়ে ঘুরে বেড়ান। ওটায়ারট্যাক্সি রাইডে ছিল অনেক ভিড়। বিকালে রামপুরা থেকে বোটে চড়ার উদ্দেশ্যে অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

দুপুরের পর মুখর হয়ে ওঠে আগারগাঁওয়ের বিমান বাহিনীর জাদুঘর প্রাঙ্গণ। নানা বয়সের সাধারণ মানুষ ছুটে আসেন এখানে। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে হাজার হাজার বিনোদনপ্রেমীর আগমন হয়। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার চত্বরে ও অনেক বিনোদনপ্রেমীর আগমন ঘটে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর—

রাঙামাটি : রাঙামাটির পাহাড়জুড়ে এখন শুধু পর্যটক আর পর্যটক। সব বিনোদন কেন্দ্রই লোকে লোকারণ্য। সব মিলিয়ে পাহাড় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আগত পর্যটকরা রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, শুভলং ঝরনা,  ডিসি বাংলো পার্ক ও কাপ্তাই-আসামবস্তি সড়কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কাপ্তাই হ্রদে নৌ-ভ্রমণের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। রাঙামাটি ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য মো. কামাল উদ্দীন জানান, ঈদের পর রাঙামাটিতে প্রতিদিনই পর্যটক আসছেন। তাই তাদের নিরাপত্তা দিতে আমাদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। রাঙামাটি পর্যটক কমপ্লেক্সের বাণিজিক্য কর্মকর্তা সূর্য সেন ত্রিপুরা জানান, সুবলং ঝরনা, পর্যটন কমপ্লেক্স, আসামবস্তি সড়ক, প্যাদা টিং টিং, বরগ্যাং ও ফুরামন পাহাড়ের মতো অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্রের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিন এখনো গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার পর্যটক আসছেন রাঙামাটিতে।

মৌলভীবাজার : পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজার জেলার পর্যটন স্পটগুলো। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন হাজারও মানুষ। এতে মুখরিত হয়ে উঠেছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সবুজ চা বাগান, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, একাত্তর বধ্যভূমি, সিতেশ্বর বাবুর চিড়িয়াখানা, কমলারাণীর দিঘি, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, বর্ষিজোড়া ইকো পার্ক, মনু ব্যারেইজ, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেইক, হামহাম জলপ্রপাত, খাসিয়া পুঞ্জি ও শিল্পকলা সমৃদ্ধ মণিপুরিসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্পটগুলো। পাশাপশি গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট, দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, রাঙাউটি ও লেমন গার্ডেনে রয়েছে পর্যটকদের ভিড়।

লাউয়াছড়া উদ্যানের ট্যুরিস্ট গাইডরা জানান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য দেখতে ঈদের পরের দিন বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার লোকজনের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। কারণ গত ঈদুল ফিতরে বন্যা থাকায় পর্যটকরা আসতে পারেননি। এবার পরিবেশ অনুকূলে থাকায় তুলনামূলক অন্যান্য বছরের চেয়ে পর্যটকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

বাগেরহাট : পর্যটকের (ইকো-ট্যুরিস্ট) পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সুন্দরবন। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দে র দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বন প্রহরীদের। সুন্দরবন বিভাগ জানিয়েছে, দেশ-বিদেশ থেকে আশা প্রতিবেশ-পযর্টকদের এ ভিড় থাকবে আরও এক সপ্তাহ।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দে  গতকাল দুপুরে কথা হয় চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে আসা রবিউল ইসলাম ও সিলেটের গোয়াইনঘাটের মাসুদ রহমানের সঙ্গে। তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবন দেখতে আসা সার্থক হয়েছে। তারা মনে করেন, পর্যটন কেন্দ গুলোতে অধিক সংখ্যক বাথরুম-টয়লেট এবং নদী থেকে ওঠানামার জন্য পাকা জেটিসহ অবকাঠামোগত আরও সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা দরকার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা ‘আবি রিভার পার্ক’-এ উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। পৌর এলাকার ভাদুঘরে শিমরাইলকান্দি এলাকার তিতাস নদী ও ভাদুঘর এলাকার কুরুলিয়া খালের মোহনায় প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমির ওপর নান্দনিক এই শিশু পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন পার্কটির নির্ধারিত জায়গায় শিশুদের জন্য বসানো হয়েছে খেলাধুলার বেশ কয়েকটি রাইড। উত্তর পাশে নদীর দিকে মুখ করে বানানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঘাট। পার্কটি সবার জন্য সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পার্কটিতে প্রবেশমূল্য ধরা হয়েছে জনপ্রতি ১০০ টাকা। পার্কের ভিতরে বিভিন্ন রাইডের টিকিট মূল্য ধরা হয়েছে প্রতি গেইমে জনপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা।

সর্বশেষ খবর