বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

মৃত্যু মিছিল তিন কারণে

কাজী শাহেদ, নাটোর থেকে ফিরে

মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিলের পেছনে মূল কারণ ধীরগতির যান, অদক্ষ চালক আর সড়কের সাইন মার্কিং ঠিকমতো না থাকা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন তথ্য পেয়েছে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারের উপায় খুঁজতে গঠন করা সরকারি তদন্ত কমিটি। তারা মহাসড়কে মৃত্যুর এই মিছিল থামাতে সরকারকে ১২ দফা সুপারিশ দিতে যাচ্ছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের  অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম জানান, তারা কয়েকটি কারণ পেয়েছেন। তার মধ্যে দুর্ঘটনার মূল তিনটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন। এগুলো নিয়ে কমিটির সদস্যরা আবারও বৈঠক করবেন। এরপর সরকারকে সুপারিশ করবেন। অনুসন্ধান কমিটির সদস্য বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী শিফান নেওয়াজ জানান, কয়েকটি কারণের মধ্যে অননুমোদিত ধীর গতির যানবাহন চলাচল, সড়কের সাইন মার্কিং ঠিক না থাকা এবং অদক্ষ চালক দুর্ঘটনার মূল কারণ। তারা নাটোরের যে ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করেছেন সেখানেও এমনটাই মনে হয়েছে। এ ছাড়া আগের দুর্ঘটনাগুলো থেকেই তারা দেখেছেন, আনফিট গাড়ির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে তৈরি অনেক গাড়ি মহাসড়কে চলছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত পণ্য ও যাত্রী বহন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

 কমিটির আরেক সদস্য গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাইওয়ের যে বৈশিষ্ট্য তা আমরা মানছি না। লোকাল অনেক গাড়ি মহাসড়কে চলে আসে। এগুলো আসলে মহাসড়কে আসার কথা নয়।’ মঙ্গলবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত কমিটির সদস্যরা নাটোরের ক্লিক মোড়ের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিকারে সরকারকে ১২ দফা সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। সুপারিশের মধ্যে আছে অননুমোদিত যান চলাচল বন্ধ করা, গাড়ির ফিটনেস কঠোরভাবে মনিটরিং, মহাসড়কের পাশে বিকল্প পার্শ্ব সড়ক নির্মাণ, সরকারিভাবে স্বল্প দূরত্বে চলাচলে পাবলিক যানবাহন নামানো, ক্যাজুয়ালিটি কমাতে হাইওয়ে পুলিশকে অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া, স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম জানান, আপাতত তারা কিছু সুপারিশ লিপিবদ্ধ করেছেন। এগুলো নিয়ে আবার আলোচনা হবে। একেক এলাকার দুর্ঘটনার কারণ একেক রকম। অন্য দুটি এলাকা পরিদর্শন শেষে এ বিষয়ে সুপারিশ করা হবে। তিনি আরও বলেন, অননুমোদিত যানবাহনগুলোর সঙ্গে বিপুল পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। তাই এগুলো বন্ধে এখনই কোনো কঠোর সিদ্ধান্ত না নিয়ে ধীরে ধীরে তা বন্ধ করার পক্ষে কমিটি। এজন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ তাদের। কেন্দ্র থেকে এসব অননুমোদিত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে কাজে লাগাতে পরামর্শ দেবেন।

কমিটির আরেক সদস্য গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম জানান, মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের স্বল্পতা আছে। ফলে দায়িত্ব পালন করা দুরূহ হয়ে পড়ে। সরকারের কাছে তাদের প্রস্তাব আছে হাইওয়ে পুলিশের জনবল বাড়ানোর। সড়ক নিরাপদ করতে হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মনে করেন তদন্ত কমিটির এই সদস্য। তবে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য বিআরটিএকে দায়ী করতে যাচ্ছে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারের উপায় খুঁজতে গঠন করা সরকারি তদন্ত কমিটি। কারণ নাটোরে দুর্ঘটনায় পড়া গাড়িটি আসন বাড়িয়ে বিআরটিএ থেকে ফিটনেস অনুমোদন নেয়। যদিও চার ডিজিটের নম্বরকে ফিটনেস দেওয়ার কথা নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর