শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

‘রক্ষাকবচ’ যখন মামলার স্লিপ

ট্রাফিক বিভাগের হালচাল ১

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

‘রক্ষাকবচ’ যখন মামলার স্লিপ

চট্টগ্রাম নগরীতে অবৈধ গাড়ি চলাচলের জন্য অভিনব পন্থা চালু করেছে ট্রাফিক বিভাগ। গাড়ির রুট পারমিটসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের মেয়াদ শেষ কিংবা বৈধ কোনো কাগজ না থাকলেও গাড়ি চলাচলের ‘বৈধ’ পারমিট দিচ্ছে মহানগর ট্রাফিক বিভাগ। এ রুট পারমিটের নাম ‘কেইস স্লিপ’। এ স্লিপে লেখা থাকে গাড়ির কাগজপত্র পুলিশের কাছে জমা আছে। ফলে গাড়ির বৈধ কোনো কাগজ না থাকলেও অবৈধ ‘কেইস স্লিপ’ দিয়ে নগরীতে চলছে শত শত যানবাহন। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশিদ হাজারী বলেন, ‘অতীতে এ ধরনের কিছু কর্মকাণ্ড হতো। ছাত্র আন্দোলনের পর তা শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। এখন ট্রাফিক বিভাগে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড নেই।’ চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (বন্দর) আকরামুল হোসাইন বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধ কেউ করে থাকলে তার দায়ভার ট্রাফিক বিভাগ নেবে না। যে-ই অপরাধ করুক, দোষ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্পটে ১৮০ জন ট্রাফিক সার্জেন্ট দায়িত্ব পালন করেন। মূলত দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সার্জেন্টরাই রুট পারমিট এবং রাস্তায় চলাচলের বৈধ কাগজপত্র না থাকা গাড়ি ও চালককে টাকার বিনিময়ে ‘কেইস স্লিপ’ প্রদান করেন। স্পটগুলোতে দায়িত্ব পালনকারী সার্জেন্টদের মধ্যে সিংহভাগই প্রতি মাসে একেকজন গড়ে দেড় হাজার ‘কেইস স্লিপ’ প্রদান করেন। বিনিময়ে গাড়ি কিংবা চালকপ্রতি নেন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এ ‘কেইস স্লিপ’ প্রদানের ক্ষেত্রে অভিনব কায়দায় দেওয়া হয় রাজস্ব ফাঁকি। প্রতি কেইস স্লিপের বিপরীতে তারা রাজস্ব খাতে দেন দেড় থেকে দুইশ টাকা। বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবণ্টন করেন। বিভিন্নজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, প্রতি মাসে এ অবৈধ বাণিজ্য থেকে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা অবৈধ আয় করেন কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, ‘কেইস স্লিপ থাকলে নগরজুড়ে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ানো যায়। ট্রাফিক সদস্যরা কখনো ডিস্টার্ব করেন না। বৈধ কাগজ থাকলে পুলিশ সদস্যরা ডিস্টার্ব করেন। তাই চালকদের অনেকে কেইস স্লিপ সংগ্রহ করেন। এ সুযোগ থাকায় অনেকে ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ যানবাহনের কাগজপত্র আপডেট রাখার প্রয়োজন মনে করেন না।’

কেইস স্লিপ বাণিজ্যের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন টিআই প্রশাসন আনোয়ারুল ইসলাম এমন অভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্বেই নগরজুড়ে চলে কেইস স্লিপ বাণিজ্য। শুধু কেইস স্লিপ বাণিজ্য নয়, আরও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর সার্জেন্ট আনোয়ারুল হক একটি কেইস স্লিপ ইস্যু করেন। নিয়ম অনুযায়ী ২১ দিনের মধ্যে এ কেইস স্লিপ নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। মামলা দায়েরের দেড় বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও এ কেইস নিষ্পত্তি করেননি তিনি। এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে আনোয়ারুল হকসহ বিভিন্ন সার্জেন্টের বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে আনোয়ারুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত করেন ট্রাফিক বিভাগের একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা। তদন্তের পর তার বিরুদ্ধে গুরু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশও করা হয়। অভিযোগের বিষয়ে উত্তর জোনের সার্জেন্ট (প্রসিকিউশন) আনোয়ারুল হক বলেন, ‘অতীতে আমি মামলা দিয়েছি এ ধরনের কিছু মামলার কপি নিয়ে জল ঘোলা করা হচ্ছে। আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই।’

সর্বশেষ খবর