বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রংপুর

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

বড়মাত্রার ভূমিকম্পপ্রবণ বলয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে রংপুর। যে ভূ-গাঠনিক অবস্থানে রংপুর দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে বড়ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে সতর্ক করছেন গবেষকরা। এ অঞ্চলে যে কোনো সময় রিখটার স্কেলে ৮ থেকে ৮ দশমিক ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। তবে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূকম্পন হলেও জানমালের ব্যাপক বিপর্যয় ঘটতে পারে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের একদল গবেষকের এই গবেষণার তথ্য নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তেমন ভূমিকম্প ঘটলে তা রংপুর অঞ্চলের মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে। ভারতের পূর্ব অংশ ও বাংলাদেশের যে অঞ্চল সম্ভাব্য সেই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, তার ১০০ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বসবাস। রংপুর আবহাওয়া অধিদফতর ও বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক অধিদফতরের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ভারতের আসাম অঞ্চল ভূমিকম্পের জন্য অতি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আসাম সংলগ্ন হওয়ায় বৃহত্তর রংপুরের পাঁচ জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধা এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন আসামে যে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প আঘাত হানে তাতে রংপুর ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থানে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৮। ভূমিকম্পের আঘাতে প্রায় সব পাকা বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। এদিকে রংপুর নগরীতে ৪৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে এখনো অসংখ্য মানুষ বসবাস করছে। পাশাপাশি চলছে দাফতরিক কর্মকাণ্ড। এর মধ্যে ১৭টি রয়েছে সরকারি ও ৩০টি ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন। ১৮৬৪ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে নির্মিত এসব ভবনে বড় ধরনের ভূমিকম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ‘ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ এবং এই ভবনে বসবাস করা নিরাপদ নয়’- সিটি করপোরেশন থেকে এমন সাইনবোর্ড সাঁটানো হলেও ভবনের বাসিন্দারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আলী বলেন, যেসব কারণে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় এর মধ্যে মাটির ফল্ট (ফাটল) অন্যতম। বাংলাদেশে দুটি ফল্টের অস্তিত্ব আছে। এর মধ্যে একটি রংপুর, ময়মনসিংহ সিলেট ফল্ট, অন্যটি হচ্ছে ভারতের আসাম রাজ্য। ফলে রংপুর অঞ্চল সরাসরি প্রথম ফল্টের আওতায়। ভূমিকম্প আঘাত হানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বাসিন্দারা।

সর্বশেষ খবর