রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ধর্ষণ মামলা দেওয়ায় মাকে খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ার ঘটনা। এমনো দিন যায় যেদিন ১৪ বছরের এক কিশোরী মেয়ের বাবা ঘরে ফেরে না, ফিরলেও রাত ভোর হয়। বাঁশের ঝাড়ু বিক্রি করেই চার সদস্যের সংসার চালান পিতা। দুই মেয়ে একজনের বয়স ১৪ আর অন্যজনের ৫। একদিকে বড় মেয়ে দেখতে বেশ সুন্দর, অন্যদিকে ঝাড়ু বিক্রেতা গরিব মানুষের মেয়ে। এ কারণে লোভাতুর দৃষ্টি পড়ে প্রতিবেশী জসিমের ছেলে মোহনের। সুযোগ বুঝে কিশোরীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মোহন। ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। প্রভাবশালী জসিম ছেলের অপকর্ম স্থানীয়ভাবে ঢাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিশোরীর মা তাতে রাজি হন না। বাবা থানায় মামলা করলে জসিমের ছেলে মোহনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মোহনের বয়স ১৬ হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে পাঠানো হয় যশোর কিশোর সংশোধনাগারে। আর এ কারণেই জসিম ক্ষুব্ধ হয় তাদের পরিবারের ওপর। তারাও বিষয়টি বুঝতে পেরে কিশোরীকে পাঠিয়ে দেয় তার নানার বাড়িতে।

 এদিকে মোহনের বাবা জসিম মা আফরোজাকে খুন করার জন্য শলাপরামর্শ করেন একই গ্রামের বাচ্চু ওরফে পাইতা, আমিনুর ওরফে আনু এবং আতিকুরের সঙ্গে। মা আফরোজাকে খুন করতে পারলে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দিতে চান মোহনের বাবা জসিম। ধর্ষণের চেষ্টা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন বাচ্চু ওরফে পাইতা। বাচ্চুর ছিল আফরোজাদের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত। তাকে বিশ্বাস করতেন আফরোজা ও তার স্বামী। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের দেখভাল করতেন বাচ্চু ওরফে পাইতা। কিন্তু এক লাখ টাকার লোভে পাইতা হাত মেলায় জসিমের সঙ্গে। আফরোজাকে খুন করার পরিকল্পনায় সায় দেন।

বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতেও ঘরে ফেরেননি বাবা। পাশের গ্রামে ঝাড়ু তৈরির উপকরণ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন। আফরোজা ছোট মেয়েকে নিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন। রাত ১১টার পর ওরা চারজন ঘরের দরজার টিন কেটে ভিতরে ঢুকে পড়েন। এরপর বাচ্চু ওরফে পাইতা আফরোজার পা ধরেন শক্ত করে। জসিম মাথা চেপে ধরেন। আতিকুর মুখ চেপে ধরেন। আর আমিনুর ধারালো ছুরি দিয়ে আফরোজাকে জবাই করেন। পরদিন সকালে ছোট মেয়ে প্রতিবেশীদের ডেকে বলে তার মার গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তারা খবর দেয় পুলিশে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। পাঁচ বছরের মেয়ে ছাড়া আর কেউ ছিল না ঘটনার সাক্ষী। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে পুলিশ বাচ্চু ওরফে পাইতাকে গ্রেফতার করে। অকপটে স্বীকার করেন খুনের ঘটনা। পরে গ্রেফতার করা হয় জসিমকে। এর মধ্যে খবর পেয়ে আত্মগোপন করেন অপর দুজন। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দেন তারা দুজন।

বগুড়ার পুুলিশ সুপার আশরাফ আলী ভুঞা জানান, গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে খুনের দায় স্বীকার করেছেন। ঘটনার সময় আফরোজার ছোট মেয়ের ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু খুনিরা তাকে হত্যা করেনি। সে বেঁচে যাওয়ায় পুলিশকে অনেক তথ্য দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর