মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
রংপুরে আইনজীবী রথীশ হত্যা

স্ত্রী ও সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুরের আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা রথীশচন্দ্র ভৌমিক বাবুসোনা হত্যা মামলায় দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। চার দিন আগে ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও গতকাল দুপুরে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান তার সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই আল আমীন সাংবাদিকদের জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর দুজনের বিরুদ্ধে রংপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আরিফা ইয়াসমিন মুক্তার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আসামিরা হলেন, রথীশচন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্থানীয় তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্নিগ্ধা সরকার ওরফে দীপা ভৌমিক এবং তার সহকর্মী একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলাম। ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন রথীশচন্দ্র ভৌমিক। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় এ ঘটনায় আটক তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র সবুজ ইসলাম ও লিটন মিয়াকে মামলার অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ ছাড়া এই খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করার পর রথীশের ব্যক্তিগত সহকারী মিলন মোহন্ত কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরকীয়া প্রেমের জেরে রথীশচন্দ্র ভৌমিক বাবুসোনাকে ডালের সঙ্গে চেতনানাশক বড়ি খাইয়ে সংজ্ঞাহীন করার পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। রথীশচন্দ্র রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজহারুলের ফাঁসির রায় হওয়ার পর তা আপিলে বিচারাধীন রয়েছে। জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলায় জেএমবির সাত সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দেয় রংপুরের বিশেষ জজ আদালত। রথীশ ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের (পিপি) আইনজীবীর দায়িত্বে ছিলেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, রথীশচন্দ্রের স্ত্রী দীপা ভৌমিক নগরীর তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। একই স্কুলের শিক্ষক কামরুল ইসলামের সঙ্গে দুই বছরের বেশি সময় ধরে পরকীয়া ছিল দীপার। বিয়ে করে সংসার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা। পথের কাঁটা রথীশকে তারা হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের ২৯ মার্চ রাত ১০টার দিকে বাসায় ফেরেন রথীশ। কাপড় পরিবর্তন করে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দীপা ভাতের সঙ্গে পাঁচটি এবং ডালের সঙ্গে পাঁচটি চেতনানাশক বড়ি মিশিয়ে রথীশকে খাওয়ান। কামরুল আগে থেকে রথীশের বাড়ির পেছনে আত্মগোপন করে ছিলেন। ভাত খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রথীশ অচেতন হয়ে গেলে কামরুল ঘরে ঢোকেন। পরে দীপা ও কামরুল গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে রথীশকে হত্যা করেন। এরপর রথীশের গায়ে শার্ট, প্যান্ট ও পায়ে জুতা পরানো হয়। ভোরে কামরুল ওই বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে সকাল ৯টার দিকে রিকশাভ্যানে করে একটি কাঠের আলমারি নিয়ে আসেন। পরে ওই আলমারিতে রথীশের লাশ ভরে নিয়ে যাওয়া হয় তাজহাটের মোল্লাপাড়ায় কামরুলের বড় ভাই খাদেমুল ইসলামের নির্মাণাধীন বাড়িতে। সেখানে লাশ পুঁতে ফেলার জন্য আগে থেকেই একটি কক্ষে বালি খুঁড়ে গর্ত করে রাখা হয়েছিল।

হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন কামরুল ও দীপা। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩ এপ্রিল রাতে রথীশের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে তাজহাট মোল্লাপাড়ায় কামরুলের ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ির একটি কক্ষে বালু চাপা দওয়া রথীশের লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব।

রথীশচন্দ্রের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক সুবলের করা মামলায় কামরুল, দীপা এবং তাদের দুই ছাত্র সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামান ছাড়াও রথীশের ব্যক্তিগত সহকারী মিলন মোহন্তকে আসামি করা হয়। ১৩ এপ্রিল কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যান মিলন মোহন্ত। এদিকে মামলার বাদী সুশান্ত ভৌমিক সুবল অভিযোগপত্রে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত বিচারকাজ শুরুর দাবি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর