বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সিরিয়ালের ফাঁদে রাজশাহীর বেসরকারি চিকিৎসা

মর্তুজা নুর, রাজশাহী

রাজশাহীতে বেসরকারি পর্যায়ের চিকিৎসাসেবার বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাঙের ছাতার মতো ক্লিনিক গড়ে উঠলেও নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা। অথচ সেবা নিতে গুনতে হচ্ছে বিপুল অর্থ। চিকিৎসকের কাছে রোগী গেলেই অপ্রয়োজনে ধরিয়ে দেওয়া হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার নানা ফিরিস্তি। তখন উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়েই রোগীকে করাতে হয় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। শুধু তাই নয়, সিরিয়ালের জন্যও ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীকে। দালালদের দিতে হয় টাকা। সিরিয়াল নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রোগী যতই অসুস্থ হোক না কেন, রোগীকে স্বয়ং হাজির হতে হয়। শুধু কি তাই, সিরিয়ালের সময়ই প্রদান করতে হয় টাকা। জানা গেছে, রাজশাহীতে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্ভুক্ত ১০০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত অসংখ্য ক্লিনিক। তবে সুপরিচিত কিংবা নামকরা চিকিৎসকরা যেসব ক্লিনিকে বসেন প্রধানত সেসব ক্লিনিকেই সিরিয়াল পেতে পোহাতে হয় রোগীদের তীব্র ভোগান্তি। সিরিয়াল পেতে সেই ভোর থেকে অপেক্ষা করতে হয় চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে। অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসকও পাওয়া যায় না দালালদের টাকা না দিলে। সরেজমিন দেখা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতদিয়া থেকে রোগী নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন মেহেদী হাসান। তার মায়ের মস্তিষ্কজনিত সমস্যা। শুধু রোগীর সিরিয়াল দিতে হবে বলে মাকে নিয়ে আগের দিন রাতেই রাজশাহীতে এসে পৌঁছাতে হয়েছে তাকে। তিনি তার মাকে নিয়ে ভোর থেকে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপেক্ষা করছেন। কারণ চিকিৎসক কফিল উদ্দিনের সিরিয়াল পেতে স্বয়ং রোগীকে উপস্থিত হতে হয়। এজন্য সিরিয়াল পেতেই অসুস্থ ষাটোর্ধ্ব বয়সী মাকে নিয়েই তাকে সিরিয়াল নেওয়ার লড়াইয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এত গেল সিরিয়াল নেওয়ার কাহিনী। চিকিৎসাসেবার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে রোগীদের। অথচ বিকল্প ব্যবস্থা নেই বলে বাধ্য হয়ে সেসব চিকিৎসকের কাছেই যেতে হয় রোগীদের। নওগাঁর আত্রাই থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন শাওন আহমেদ। তার দুই বছরের বাচ্চা এখনো কথা বলতে শিখেনি। গেলেন শিশু বিশেষজ্ঞ বেলাল আহমেদের কাছে। তিনি পুরো কথা না শুনেই এক গাদা টেস্ট লিখে দিলেন।  অথচ মেডিকেল বোর্ডের নির্দেশনায় রয়েছে, রোগের প্রকৃতি ও রোগীকে বুঝতে একজন চিকিৎসকের কমপক্ষে ৩৫ মিনিট সময় দেওয়া উচিত। সেখানে মাত্র দুই মিনিটে একজন রোগীকে কীভাবে দেখা সম্ভব?

তবে এসব বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে বার বার ফোন দেওয়া হলেও ফোন ধরেননি রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. সনজিত কুমার সাহা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর